বাংলাদেশের একেবারে উত্তরের রংপুর বিভাগের জনপ্রিয় একটি খাবার শোলকা। আজ থাকছে শোলকা বানানোর রেসিপি। অন্যদিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগ চট্টগ্রামের নিজস্ব এক খাবার মধুভাত। থাকছে মধুভাত বানানোর প্রণালীও।
পাট শাক দিয়ে রান্না করা এক ধরণের খাবার হল ‘শোলকা’। বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব এক খাবার এটি। এ দেশের অন্য কোথাও এই খাবার দেখবেনও না, এমনকি নামও শুনবেন না। অন্য সব শাক এর মতন শোলকার রান্না নয়। বরং বলা চলে ‘শোলকা’ রান্নার প্রক্রিয়া একটু জটিল। বিশেষ করে এর কাটার ধরন। পাট শাকের পাতা গুছিয়ে গুছিয়ে মুঠো ভর্তি করে নিয়ে কুচি কুচি করে কাটতে হয়। পাট শাক যেহেতু একটু তেতো তাই এর তেতো কাটানোর জন্য আরও পাঁচ-সাতটি শাক পাতা একটুখানি করে দেওয়া হয়। যেমন লাউ পাতা, কুমড়ো পাতা, পুই পাতা, কচু পাতা, সজনে পাতা; মানে হাতের নাগালে যা পাওয়া যাবে তাই দেওয়া যেতে পারে।
এবার আসা যাক রান্নায়। শোলকার অন্যতম একটা উপাদান খাবার সোডা। শোলকাকে পিচ্ছিল করার জন্য এক চিমটি খাবার সোডা দেয়া হয়। প্রথমে একটু জল গরম করতে করতে দিয়ে সেখানে পরিমাণ মত নুন, কাঁচা লঙ্কা, রসুন এবং সোডা দিয়ে নাড়তে হবে। তারপর কেটে রাখা পাটশাক দিতে হয়। এবার দিন অল্প একটু আদা কুচি। ১০ থেকে ১৫ মিনিট হালকা আঁচে নাড়লেই হয় প্রস্তুত প্রিয় ‘শোলকা’’। আর একটি কথা, শোলকায় কাঁঠালের বিচি দিলে তো কথাই নেই। তখন এর স্বাদ হয় আরও অসাধারণ।
মধুভাত এক ধরনের শীতকালীন মিষ্টি জাতীয় খাবার যা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবারের একটি। মূলতঃ চাল, নারকেল, দুধ এবং চিনির সমন্বয়ে এটি তৈরি করা হয়। মধুভাতের প্রধান বৈশিষ্ট্য এই ভাত রাতে রান্না করে, পরদিন সকালে পরিবেশন করা হয় এবং খেতে হয় খালি পেটে। আরেকটি বিশেষত্ব হল এই শর্করা জাতীয় খাবার দীর্ঘক্ষণ ঢেকে রাখার ফলে গাঁজন প্রক্রিয়ায় এতে কিছুটা অ্যালকোহল তৈরি হয়। ফলে মধুভাত খেলে ঝিমুনি আসে। এই কারণে চট্টগ্রামে রয়েছে এর জনপ্রিয়তা।
কীভাবে তৈরি করবেন মধুভাত? এর প্রধান উপকরণ হলো বিনি বা বিন্নি চাল (কালি জিরা চাল নামেও পরিচিত) এবং জালা চালের গুঁড়ো। জালা চাল এক ধরনের চাল যা অঙ্কুরিত বা বীজ ধানের থেকে পাওয়া যায় এবং এই চাল সাধারণত মিষ্টি হয়ে থাকে। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে রয়েছে নারিকেল, দুধ, চিনি এবং নুন। চট্টগ্রামে সাধারণতঃ বিভিন্ন উৎসব আয়োজনের অংশ হিসেবে মধুভাত তৈরি করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে আশ্বিন-কাার্তিক মাসে কলসী ভরেমধুভাত পাঠানোর রেওয়াজ রয়েছে।
Discussion about this post