কলকাতার যমজ শহর হিসেবে হাওড়ার বেশ সুপরিচিতি রয়েছে। কলকাতায় অন্যান্য অনেক কিছুর মতই শহরের অলিতেগলিতে ভোজনবিলাসীদের জন্য নানা তীর্থস্থান গড়ে উঠেছে যুগ যুগ ধরে। পিছিয়ে নেই হাওড়াও। দেশ স্বাধীনের অনেক আগে থেকেই এ শহরেও ভোজনপ্রেমিকদের রসনার তৃপ্তি মেটাতে গড়ে উঠেছিল নানা খাবারের দোকান, রেস্তোরাঁ৷ কলকাতায় হোক বা হাওড়াতে, এগুলো আসলে ঠিক খাবারের দোকান নয় ৷ বরং এগুলোকে ফুড মিউজিয়াম বললেও খুব একটা ভুল বলা হবে না, কী বলেন? হাওড়ায় প্রতিষ্ঠিত এমনই এক জনপ্রিয় কেবিন হল দত্ত কেবিন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ জায়গার জনপ্রিয়তা কিছুটা ম্লান হয়তো হয়েছে। যদিও এর ঐতিহ্য এবং খাবারের স্বাদ এখনও অমলিন রয়ে গিয়েছে।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2022/06/3-min-2022-06-15T185441.272.jpg)
সময়টা ১৯২০। বাঙালির গর্বের হাওড়া ব্রিজ নির্মাণের আগে থেকেই ভোজনরসিক বাঙালিদের উদর তৃপ্তির ভার নিয়েছিল এই দত্ত কেবিন। গঙ্গার ধারে চাঁদমারী ঘাটের পাশ দিয়ে হাওড়া স্টেশনমুখী পরপর কয়েকটি গুমটি ঘর তৈরি হয়েছিল স্টেশনের নিত্যযাত্রীদের জন্য। তারা যাতে খাবার খেয়ে ও খানিক বিশ্রাম নিয়ে তাদের গন্তব্যে যেতে পারে তাই এই ব্যবস্থা করা হয়। পরে সেখানেই প্রতিষ্ঠাতা অম্বিকা কুমার দত্তর হাত ধরে পথ চলা শুরু এই দত্ত কেবিনের। বহু বাধা-বিপত্তি সামলে আজও প্রসিদ্ধ এই প্রতিষ্ঠান চলছে স্বমহিমাতেই।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2022/06/1-min-2022-06-15T185442.348.jpg)
‘মেসার্স কিশোরী মোহন দত্ত অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নাম বদলে এই রেস্তোরাঁ এখন মানুষের কাছে ‘দত্ত কেবিন’ নামেই সুপ্রসিদ্ধ। কেবিনের প্রতিষ্ঠাতা অম্বিকাবাবুর লক্ষ্য ছিল ন্যায্য মূল্যে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেই পথ অনুসরণ করেই বংশ পরম্পরায় এই দোকানের হাল সামলাচ্ছেন তার উত্তরসূরীরা। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার অঞ্জন কুমার দত্ত। এই কেবিনের মেনু কার্ডে তালিকাভুক্ত রয়েছে ভাত ডাল আর মাছের ঝোলের মত নানান বাঙালি পদ। তারপর ফিশ ফ্রাই,ফিশ কাটলেট, ডেভিল সহ মোগলাই, এগরোল, পরোটা এসব তো আছেই। কর্ণধার অঞ্জন দত্তের কথায়, মাছ ভাত ৬০ টাকা আর নিরামিষ ৫০ টাকায়। পেট পূরণ করতে দত্ত কেবিনের দরজা সবসময় খোলা নিত্যযাত্রী সহ খাদ্যরসিকদের জন্য।
শতাধিক বয়স হলেও খাবারের মান আর দাম দুয়ের জন্য এখনও ভিড় জমে হাওড়ার দত্ত কেবিনে। এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে গিয়ে নানা ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে এই দোকান। কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে খাবার পরিবেশন থেকে শুরু করে জাতীয় ফুটবল ক্লাব মোহনবাগানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিষেবা দেওয়ার বেলায় দত্ত কেবিনেরই একাধিপত্য ছিল। তবে অতিমারির প্রভাবে ৯৩ জন কর্মচারী কমে বর্তমানে ২৭ জন কর্মচারীতেই চলছে দত্ত কেবিন। আহারে বাহারে দত্ত কেবিন এভাবেই খদ্দেরের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সাথে হাসিও ফোটাতে থাকুক আরও অনেক শতক!
Discussion about this post