ভোজনরসিক বাঙালির মিষ্টিপ্রেম বহু প্রাচীন। শেষপাতে হোক বা লুকিয়ে চুরিয়ে! মিষ্টি জড়িয়ে আছে জীবনযাত্রায়। যুগ যুগ ধরে বাঙালি মজে আছে ভিন্ন স্বাদের মিষ্টিতে। এখন পাড়ার মোড়ের দোকানে সব মিষ্টিই মেলে। কিন্তু স্বাদকোরকের বিলাসী চাওয়া! সে তো আর মেটেনা তাতে। যেখানে যে মিঠাইয়ের খ্যাতি, জিভ ছুটে চলে সেদিকেই। তেমনই এক মিষ্টি, কাজু বরফি। জন্মস্থান কাঁথি। চারকোণা আকৃতিতে যে ঢেকে দেয় অতিথি আপ্যায়নের সমস্ত ত্রুটি।
কাজু বরফি আসলে একরকম সন্দেশ। তৈরী করতে লাগে কাজুবাদাম, চিনি,দুধ,এলাচ ইত্যাদি। কাঁথিতেই আছে কাজুর বাগান। সেখান থেকে আসা কাজুকে প্রথমে ভিজিয়ে নিতে হয়। তারপর মিক্সারে গুঁড়ো করা। এবার ফুটিয়ে চারকোণা করে কাটলেই তৈরী, বহু প্রতীক্ষিত কাজুর সন্দেশ। সন্দেশ খুব পুরনো মিষ্টি। যার গায়ে লেগে আছে প্রাচীন গন্ধ। সেকালে দেবতার পুজোয় ছানা ব্যবহার করা যেত না। মিষ্টান্ন ভোগে তাই একমাত্র সহায় ছিল সন্দেশ। রসনাপ্রেমী বাঙালি তারপর অনেক গবেষণা করেছে সন্দেশ নিয়ে। ফল হিসেবে যা পেয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল কাজু বরফি। এখন প্রায় সব দোকানেই তা মেলে। কিন্তু রসনার মনে রেখে দেওয়া স্বাদ! মিলবে কেবল কাঁথিতেই।
প্রায় ৮৫ বছর আগের কথা। কালাচাঁদ প্রধান ওরফে কালু ময়রা এই মিষ্টি বানিয়ে ফেলেন। পৃথিবীর কিছু অন্যতম আবিষ্কারের মতো অযাচিত ভাবেই। কালু ময়রা কাজুর গুঁড়ো দিয়ে বরফি বানাতে চাননি। অন্য মিষ্টি গড়তে গিয়ে ভুল করে গড়েছিলেন সন্দেশটি। তবে পরদিন বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া সেই দোকানে ভিড় জমেছিল খুব। অনেকে এসেছিলেন মিষ্টি কিনতে। তারপর দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বরফি সটান বিদেশ। এখনও রপ্তানি হয় টোকিও, লাস ভেগাস, নিউ ইয়র্ক, মালয়েশিয়া এমনকি প্যারিসে। তবে বাসস্ট্যান্ডের দোকানটি বন্ধ হয়ে যায় কালু ময়রার মৃত্যুর পরেই। এখন কাছাকাছি কয়েকটি দোকানেই মেলে কাঁথি স্পেশাল কাজু বরফি। বিশেষ স্বাদের পেছনে আছে কাজুর গুঁড়ো। মূলতঃ কাজু গুঁড়ো করার বিশেষত্বের উপর দাঁড়িয়ে আছে বরফির স্বাদ। দাম এমন কিছু নয়। ছোটো বরফি পাঁচ টাকা। বড়গুলো আট থেকে পনেরো টাকা। স্বাদের তারতম্যেই দাম ওঠানামা করে। এখন উপযুক্ত ময়রার অভাবে ধুঁকছে বরফির মান। কাঁথির কাজু বরফি শব্দে জিভে ভেসে উঠতো যে কড়াপাকের গন্ধ, তা কি তবে হারিয়ে ফেলছে বাঙালি!
Discussion about this post