বাংলা ও বাঙালির বিরাট খাদ্য তালিকা নিয়ে কমবেশি সবাই অবগত। এত বাহারি পদের তালিকা,হরদম সেখানে কিছু না কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। শ্রী চৈতন্যদেবের সময়ে যে বড়ি ছিল নিরামিষ রান্নার অন্যতম উপকরণ, বাঙালি দিল তা মাছের ঝোলের সাথে মিশিয়ে। তাহলে মিষ্টান্নই বা বাদ যায় কীসে? রসগোল্লা, মনোহরা ,বাবরসা, লেডিকেনি ইত্যাদি এত রকমারি মিষ্টির সম্ভার নিয়ে বাঙালির কারবার। রসনার স্বাদ আর মনের চাহিদা মেটাতে তার ঝুলিতে একদিকে রয়েছে সন্দেশ, প্যারার মতো শুকনো মিষ্টি। তেমনি রয়েছে রসালো রসগোল্লা, লালমোহন ইত্যাদি। তবে এক ধরনের মিষ্টি আছে যা বাইরে থেকে দেখতে একদম শুকনো কিন্তু ভিতরে রসের খনি! নাম হল ‘সাবিত্রী’।
ঢাকা থেকে প্রায় ২৪৬ কিমি দূরে মেহেরপুর । সেখানেই সাবিত্রী মিষ্টির জন্ম ১৮৬১ সালে। মিষ্টির জনক বাসুদেব সাহা। কোনো নতুন মিষ্টি তৈরীর আশায় তিনি তৈরী করেছিলেন এই মিষ্টি যা দেখতে শুকনো হলেও মোটেও তাই নয়। সেই সময় তাঁর মিষ্টির দোকান ছিল এলাকার জমিদার সুরেন বসুর বাড়ির সামনে। তাঁর তৈরী এই মিষ্টি জমিদার বাড়ির প্রিয় মিষ্টিতে পরিণত হয়েছিল খুব অল্প সময়েই। তারপর ইংরেজদের হাত ধরে বাইরে প্রচার। আর সেই দোকান বলতে খড় আর টিনের ছাদ দেওয়া দোকান। ১৬০ বছর পরেও আজও আছে সেই দোকান। সময়ের সঙ্গে বাহ্যিক রূপের পরিবর্তন স্বাভাবিক। এখন পাকা দোকান।
বর্তমানে মিষ্টির দোকানের নাম ‘বাসুদেব এন্ড গ্র্যান্ড সন্স।’ বর্তমানে দোকান মালিক বিকাশ সাহা। তাঁরাই এখনো পর্যন্ত অক্ষুন্ন রেখেছেন সাবিত্রীর পথ চলা। মূলতঃ দুধের সর বা চাঁচি দিয়েই এই মিষ্টি প্রস্তুত করা হয়। দুধ হতে হবে একেবারে খাঁটি। দুধ ঘন করে জ্বাল দিয়ে ছানা তৈরী করা হয়। তারপর আরো খানিক কড়াপাক আর চিনির মিশ্রণে রূপ পায় সাবিত্রী। এই দোকানের সাবিত্রী মিষ্টির বিশেষত্বই হল তাঁর অপরিবর্তিত স্বাদ এবং মিষ্টির গায়ে নাম লেখা ‘সাবিত্রী’। বাংলাদেশি মুদ্রায় দাম প্রতি কিলো ৩০০ টাকা। এক কেজি দুধ থেকে ৬-৭ টি মিষ্টি প্রস্তুত করা যায়।
তবে এই মিষ্টি পেতে গেলে অর্ডার দিতে হবে একদিন আগে থেকে। চাহিদা বোঝা যাচ্ছে তো? প্রবাসীরা দেশে ফিরলে অন্ততঃ একবার হলেও মিষ্টি কিনে নিয়ে যান কর্মক্ষেত্রে। এছাড়াও উৎসবের মরশুমে চাহিদা একটু বেশিই থাকে। তবে যুগ তো এগিয়েছে অনেক। সাবিত্রীর নামে অনেক রকম মিষ্টিই বিক্রি হয়। গুণগত মান আর বিশুদ্ধতা যেখানে মানা হয় না। ফলে দোষারোপ পড়ে মূল সাবিত্রীর উপর। তবে যাই হোক ওপার বাংলায় গেলে অবশ্যই মেহেরপুরের সাবিত্রী মিষ্টির স্বাদ আস্বাদন বাধ্যতামূলক। অভিজ্ঞতার ঝুলি বাড়িয়ে দেখা গেল তৈরী হচ্ছে আরও নতুন কিছু!
তথ্য ঋণ – উজ্জ্বল দত্ত
Discussion about this post