চট্টগ্রামের খুব প্রচলিত একটা কথা আছে– ”মেইজ্জান হাইলে আইয়ূন আঁরার শহর চট্টগামে।” যার অর্থ হল মেজবান খেতে হলে আসুন আমাদের শহর চট্টগ্রামে। রমজান মাস জুড়ে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার আয়োজনের তালিকায় মেজবানের মাংস থাকবে না – একথা চট্টগ্রামবাসীরা ভাবতেই পারেন না। ইফতারের আয়োজনে কমবেশি সব জায়গাতেই নিজস্ব কিছু আঞ্চলিক পদের ছোঁয়া থাকে। এখন কথা হল মেজবান আসলে কি কোনো পদ? আজ্ঞে না, এই মেজবান আসলে দেশে ঘরের লোকেদের ভাষায় একপ্রকার ‘মোচ্ছব’। যেখানেই হোক, যত খরচই হোক না কেন, প্রায় পাঁচ দশক ধরে এই রেওয়াজে অংশীদার থাকার লোভ চাটগাঁইয়ারা এড়াতে পারেন না।
মেজবানে রান্নার তালিকায় থাকে সাদা ভাত, সঙ্গে গরুর মাংস। এছাড়া ছোলার ডালে গরুর হাড়সহ মাংস, সেই সঙ্গে গরম নলার ঝোল। মূল উপকরণটি হল গরুর মাংস। গরুর মাংসের গোড়া ও নলা দিয়ে এরকম তিন-চার রকমের সুস্বাদু পদ তো থাকবেই। চট্টগ্রামের বিখ্যাত একটি এলাকা হল চৌমুহনীর পীরবাড়ি, যেখানে শুধুমাত্র পবিত্র রমজান মাসে বিক্রি হয় মেজবানের মাংস। দাম প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। বাড়িতে মেজবানি আমেজ পেতে জেনে রাখুন রেসিপিটাও।
উপকরণ হিসেবে লাগে গরুর মাংস ৫০ কেজি, আদা ২৫ কেজি, রসুন ৪০০ গ্রাম, শুকনো মরিচ ৫০০ গ্রাম, মরিচ গুঁড়ো ৫০০ গ্রাম, রাঁধুনি মরিচের গুঁড়ো ১০০ গ্রাম, জিরের গুঁড়ো ২০০ গ্রাম, ধনেগুঁড়ো ১০০ গ্রাম, হলুদ ৫০০ গ্রাম, পোস্ত ২০০ গ্রাম, চিনাবাদাম ৩০০ গ্রাম, এলাচ-দারুচিনি পরিমাণ মত, নুন ১ কেজি, রাঁধুনি মশলা ২০০ গ্রাম, সর্ষের তেল ৩ লিটার, পেঁয়াজ ৮ কেজি। প্রথমে মাংস ধুয়ে হাঁড়িতে রাখতে হবে। এবার পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মশলা, তেজপাতা, দারুচিনি, এলাচ,লাল লঙ্কাসহ সব মশলা দিতে হবে। এরপর নুন ও তেল দিন পরিমাণমত। শেষে ২ লিটার জল দিয়ে উনুনে বসিয়ে দিন হাঁড়িটি। এবার প্রায় ঘণ্টাখানেক মত রেখে নামিয়ে নিন। ব্যস্, তৈরি মেজবানি মাংস।
চট্টগ্রামে মেজবানের মাংস রান্নার জন্য বিখ্যাত আবুল বাবুর্চি। বংশপরম্পরায় বাবুর্চিরাই চট্টগ্রামের এই ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছেন নিজেদের হাতের জাদুতে। এককালে আরবের সঙ্গে এই জেলার যোগাযোগের সুবাদে মেজবানের মাংস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে চট্টগ্রামে। আর এখন এই সুস্বাদু পদ আঞ্চলিক গণ্ডি পেরিয়ে দেশে তো বটেই, সঙ্গে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে। তাহলে? রেসিপি তো জানলেন, তাই এবার উইকেন্ড না হয় জমুক চট্টগ্রামের মেজবানের মাংসের সাথে!
চিত্র ঋণ – প্রথম আলো
Discussion about this post