কলকাতা আর কলকাতার পুজো এই দুইয়ের গন্ধে সারা বিশ্ব যেন অবাক দৃষ্টিতে এই বাংলাকে দেখে। কলকাতার পুজোয় সাধারণ আটপৌরে জায়গাগুলো আনন্দের আবেগে ভাসে। একটা গভীর বোধে বেশ কিছু সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের সূচনা হয়। লোকজন এমন একটা আমেজকে খুঁজে থাকে, যা সব কিছুকে ছাড়িয়ে যায় এই শহরের উৎসবের আঙ্গিকে আর অভিনবত্বে। পুরনো কলকাতার দিকে যদি তাকানো যায়, সেখানে বনেদি বাড়ির পুজোই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। যেমন ছাতু বাবু লাটু বাবুর বাড়ির পুজোর কথাই ধরা যাক।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2021/10/1-min-2021-10-12T083303.597.jpg)
যে সময় ব্রিটিশরা একটু একটু করে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করছে। বাংলার ব্যবসায়ীদের মধ্যে রামদুলাল দেব (সরকার) তখন বেশ পরিচিত নাম। তবে রামদুলাল ব্রিটিশদের সঙ্গে নয়, বরং মার্কিনিদের সঙ্গে ব্যবসা করেই যশ লাভ করেছিলেন। আমেরিকার স্বাধীনতা লাভের পর এই ব্যবসা শুরু হয়। এখান থেকে মূলতঃ মশলা ও মসলিন রফতানির ব্যবসা ছিল রামদুলালের। বদলে আমেরিকা থেকে আসতো নানা পণ্য। বলা হয়, রামদুলাল দেব ছিলেন বাংলার প্রথম কোটিপতি। এই রামদুলাল দুর্গাপুজোর প্রচলন করলেন ১৭৭০ সালে, তাঁর বিডন স্ট্রিটের বাড়িতে। তিনি প্রয়াত হবার পর উত্তরাধিকার সূত্রে পুজোর দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর দুই পুত্র আশুতোষ নাথ দেব বা ছাতুবাবু এবং প্রমথ নাথ দেব বা লাটুবাবুর ওপর। কলকাতার বাবু কালচারের দুই দিকপাল ছিলেন এই দুই ভাই। এদের সময়ই এই বাড়ির পুজো বিখ্যাত হয়। এখানে শাক্ত, বৈষ্ণব ও শৈব তিনটি মতের মিলনে দেবীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। বৃহৎ নান্দীকেশ্বর পুরাণ মেনে পুজো হয়ে আসছে বরাবর।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2021/10/2-min-2021-10-12T083302.773.jpg)
তবে চিরাচরিত পারিবারিক মায়ের রূপটি এখানে একটু অন্যরকম। এখানে প্রতিমার ডানদিকে মহাদেব ও বামে শ্রী রামচন্দ্র বিরাজ করেন। দুর্গার দুই সখী জয়া ও বিজয়া থাকে দুইপাশে। ১০৮ টি রুপোর প্রদীপ জ্বেলে হয় সন্ধি পুজো। অষ্টমীতে কুমারী পুজোর প্রচলন আছে ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়িতে। অষ্টমী পুজোর পরে বাড়ির মহিলারা সিঁদুর খেলেন। এটাই এ বাড়ীর রেওয়াজ। এই বাড়িতে আজও পুজোর পোশাক শুধুই শাড়ি ও ধুতি। এছাড়া অন্য পোশাক পরেন না পরিবারের লোকেরা। এখানে বলির প্রচলন আছে। চালকুমড়ো ও আখ বলি দেওয়া হয়। অষ্টমীতে এখানে মহাভোজের ব্যবস্থা করা হয়। লুচি-তরকারি ছাড়াও লেডিকেনি ও দরবেশ ভোগ দেওয়া হয় মা দুর্গাকে। এছাড়া অন্যদিন পঞ্চদেবতা, নবগ্রহ, ৬৪ দেবদেবী ও মা দুর্গাকে নিয়ে মোট ৭৯টি নৈবেদ্য প্রস্তুত করা হয়। আসলে আজও বনেদি বাড়ি গুলোকে ঘিরে পুজোর আচার রীতি রেওয়াজ যথেষ্ট নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়। কিন্তু পুজোকে ঘিরে পারিবারিক উন্মাদনায় কোন ভাঁটা পড়ে নি।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – আত্রেয়ী কর
Discussion about this post