‘ফার্স্ট ফুড’ নামটা শুনলেই যেন জিভে জল চলে আসে বাচ্চা থেকে বড়ো সবার!বিরিয়ানি, চাউমিন, কাবাব, পিৎজা, বার্গার আরও না জানি কত কী! তবে জানেন কি ফার্স্ট ফুডের রমরমা ছিল আজ থেকে দু’হাজার বছর আগেও, এমনই কিন্তু বলছে ইতিহাস!
গত বছর থেকেই ইটালির প্রাচীন ‘মৃত’ শহর পম্পেইয়ে খননকার্য শুরু করেছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। সম্প্রতি সেখানে মিলল ‘ফাস্ট ফুড’ স্টলের খোঁজ! প্রাচীন রোমানদের এ সব রোজকার জলখাবার ছিল, নাকি স্বাদ বদলের আয়োজন? দোকান দেখে মাথা ঘামাতে শুরু করে দিয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। রংবেরঙের ইটের তৈরি চুল্লি-সহ লাইভ স্ন্যাক্স কাউন্টার। ভাবা যায়? সঙ্গে কাউন্টারের গায়েই সচিত্র মেনু— বুনো মোরগ, বুনো হাঁস ইত্যাদি। আর জায়গায় জায়গায় ছাইয়ের পুরু আস্তরণ! না, চুল্লির ছাই নয়। এ ছাই জ্বলন্ত লাভার ফেলে রাখা ছাপ— আগ্নেয়গিরির ছাই। প্রায় দু’হাজার বছর আগেকার।
ইতিহাস বলছে, ৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির দমকা লাভার স্রোতে চাপা পড়ে যায় পুরো পম্পেই নগরী। অন্তত ছ’মিটারের লাভা-সমাধি। এতে ২ হাজার থেকে ১৫ হাজার মানুষ মারা যান। অনেকে পালিয়েও বাঁচেন। যেমন গবেষকদের অনুমান, ওই রোমান ফাস্ট ফুডের স্টলটি অগ্ন্যুৎপাত শুরু হওয়া মাত্রই তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদ মাসিমো ওসানা সদ্য আবিস্কৃত এই স্টলের সম্পর্কে জানান যে, দোকানটি খুব সম্ভবতঃ সিলভার ওয়েডিং স্ট্রিট এবং অ্যালে অব ব্যালকনিজ়-এর মাঝামাঝি কোথাও ছিল। এই প্রাচীন ফার্স্ট ফুড স্টলটির নাম ছিল ‘দ্য থার্মোপোলিয়াম অফ রেজিও ভি’।গ্রিক শব্দ ‘থার্মোস’ মানে গরম, আর ‘পোলেও’-র অর্থ বিক্রি! গরমাগরম খাবার বিক্রির জন্যই ছিল লাইভ কাউন্টার।
সাম্প্রতিক খোঁড়াখুঁড়িতে ওই থার্মোপোলিয়ামে আরোও মিলেছে হাঁস, শূকর ও ছাগলের হাড়ের টুকরো । মাটির পাত্রে পাওয়া মাছ ও শামুকের অবশেষ দেখে ধরে নেওয়া যায়, এ সবও ছিল মেনুতে। এবং বেশির ভাগটাই পরিবেশন করা হত ওয়াইন বা এই জাতীয় কোনও পানীয়ের সঙ্গে। ওয়াইনের স্বাদ বাড়াতে প্রাচীন রোমানদের মধ্যে পেষাই করা মটরশুঁটি ব্যবহারের চল ছিল। তবে এখানেই শেষ নয়! আসল কথাটাই তো এখনও বলা হয়নি,জানেন কি সেকালেও বিরিয়ানি ছিল এই স্টলের সো-স্টপার! প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণায় এখানে নানা ধরণের খাবারের মধ্যে অন্যতম একটি খাবার ছিলো পাইল্লা, যা স্পেনের একটি খাবার এবং স্বাদে বিরিয়ানীর মতোই অপূর্ব। এই লোভনীয় পদের জন্যই প্রতিদিন এখানে ভিড় জমত বহু মানুষের।মূলতঃ এই স্টলটি মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যেই বেশী জনপ্রিয় ছিল।
তবে এই খননকার্য চলাকালীন মিলেছে দুই ব্যাক্তির দেহাবশেষ, অনুমান করা হয় অগ্ন্যুৎপাতের ফলেই মৃত্যু হয়েছিল তাদের। ইতিমধ্যেই প্রত্নতাত্ত্বিকদের এই অত্যাশ্চর্য আবিস্কার সাড়া ফেলেছে সারা বিশ্বে, তাদের গবেষণায় আরও একবার জেগে উঠেছে লাভা স্রোতের নীচে ঘুমিয়ে পড়া এই জনপ্রিয় ফার্স্ট ফুড স্টলটি।
Discussion about this post