“জাম, রসগোল্লা পেয়ে শ্বশুর করলেন চটে নালিশ, আশা ছিল আনবে জামাই গয়ানাথের বালিশ।” তবে এই বালিশ কিন্তু আমাদের নিত্যপরিচিত তুলোর বালিশ একদমই নয়। এই বালিশটিকে আমরা খেতেও পারি। শুনে অবাক লাগছে তাই না? এটি আসলে ওপার বাংলার অভিনব ধরনের একটি মিষ্টি। দুধ, ছানা, ময়দা, চিনির রস এবং ক্ষীরের প্রলেপ দিয়ে বানানো বালিশ আকারের এই মিষ্টি। আর এই মিষ্টিরই এক একটির আকার প্রায় বিশাল। একটি খেলেই আপনার পেট ভরে যেতে বাধ্য। কিন্তু ঠিক কার মস্তিষ্ক প্রসূত এই মিষ্টি? আসুন জানা যাক সেই জন্ম-ইতিহাস…
ওপার বাংলার বিখ্যাত এই বালিশ মিষ্টির জনক হলেন গয়ানাথ ঘোষাল। তখনও দেশভাগের কাঁটাতার চিরে যায়নি দেশের বুক। ওপারের ময়মনসিংহের নেত্রকোনা অঞ্চলের ঘোষ পরিবার ছিল মিষ্টি তৈরিতে বেশ বিখ্যাত। সেই পরিবারেরই গোয়ানাথের স্বপ্ন ছিল এক নতুন এবং অভিনব ধরনের মিষ্টি আবিষ্কার করবেন তিনি। সে মিষ্টি দিয়েই তাঁর নাম মনে রাখবে মানুষ। মৃত্যুর পরও তিনি হবেন অমর।
যেমন ভাবা তেমন কাজ! মিষ্টি তৈরির নেশায় মেতে উঠলেন গয়ানাথ। এভাবেই একদিন তিনি বানিয়ে ফেললেন বিশাল আকারের একটি মিষ্টি। দোকানে ক্রেতারা এলে তাদের খেতেও দিলেন তা। নতুন এক মিষ্টিমুখ করে তো ক্রেতারা বেজায় খুশি। মিষ্টিটির বেশ প্রশংসাও করলেন তাঁরা। মিষ্টিটি দেখতে বালিশের মত হওয়ায় ক্রেতাদের অনুরোধেই এর নাম রাখা হল ‘বালিশ মিষ্টি’।
‘৪৭য়ের দেশভাগের সময় ঘোষ পরিবারের প্রায় অনেকেই ভারতে চলে আসেন। গয়ানাথ কিন্তু আসেননি তাঁর পৈতৃক ভিটে ছেড়ে। তিনি শুধু এই মিষ্টি নিয়েই মেতে থাকতেন প্রায় দিনরাত। এমনকি তখনও পর্যন্ত মিষ্টি তৈরির গোপন রহস্যও কাউকে শেখাননি তিনি। কিন্তু ‘৬৯ সালে পরিবারের টানে কলকাতায় চলে আসেন গয়ানাথ। ঠিক তখন তাঁর দোকানের কর্মচারী নিখিল মোদককে বালিশ মিষ্টির গোপন রহস্য শিখিয়ে যান তিনি। বাংলাদেশে আজও এই মিষ্টির বেশ চাহিদা রয়েছে। পেটপুরে ভূরিভোজের পর শেষপাতে বালিশ মিষ্টির দেখা মিললে, আজও খুশি এবং তৃপ্তিতে মেতে ওঠেন ওপার বাংলার মানুষ।
তথ্য ঋণ – মোহাম্মদ আলামিন
Discussion about this post