ছোটবেলার ইতিহাস বইটা মনে আছে? পাঠান, মোগোল সাম্রাজ্য, পানিপথের যুদ্ধ, পলাশীর যুদ্ধ, সিপাহী বিদ্রোহ ইত্যাদি ইত্যাদি। ঘুম পেয়ে গেল, তাই তো? একটু ভেবে দেখুন, এইসব ইতিহাসের চেয়েও পুরনো কিছু যদি আপনার সামনে থাকে? ঘুম উড়ে যাবেই! বইয়ে পড়া ঐতিহাসিক ঘটনার চেয়েও পুরনো এক ইতিহাস দিব্যি বেঁচে রয়েছে আপনার বাড়ির খুব কাছেই। তাকে আপনি চোখে তো দেখতেই পারেন, আবার চেখে দেখতেও পারবেন। কথা হচ্ছে, ব্যারাকপুরের ১৯০ বছরের পুরনো জলুয়ার মিষ্টির দোকানের।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2024/01/1-18.jpg)
যে দোকানে সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এসে কচুরি আর রাবড়ি খেয়ে গেছেন; মিষ্টি খেয়ে গান শুনিয়ে গেছেন মহম্মদ রফি; প্রভূত প্রশংসা করে গেছেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, সেই দোকানটি আজও চলমান। বেশ ভালভাবেই চলমান। ১৮৩২ সালে স্থাপিত হয়েছিল এই মিষ্টির দোকান। সিপাহী বিদ্রোহ সহ ব্যারাকপুর এবং বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা ঘটনার জীবন্ত সাক্ষী হয়ে চলছে জলুয়ার মিষ্টির দোকানটি। দোকানের প্রত্যেকটি ইট, কাঠ, পাথর যেন সাক্ষ্য বয়ে চলেছে ১৯০ বছরের।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2024/01/2-16.jpg)
১৯০ বছর ধরে কোনোরকম সাইনবোর্ড বা নাম ছাড়াই শুধুমাত্র নিজেদের খাবারের স্বাদের জোরে ব্যারাকপুর স্টেশনের সামনে ব্যবসা করে যাচ্ছে এই দোকানটি। ছয় থেকে সাতটি প্রজন্ম এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। দোকানের এক কর্মচারী নিতাইচন্দ্র মণ্ডল এখানে কাজ করছেন দীর্ঘ ৬৬ বছর ধরে। তাঁর মত মানুষদের কর্মদক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাই হয়ত বাঁচিয়ে রেখেছে ব্যারাকপুরের এই সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে। ঐতিহ্য অটুট রাখতেই সম্ভবত বংশপরম্পরায় দোকানের মালিকরা দোকানটিকে সেই প্রথম অবস্থার মতই রেখে দিয়েছেন। তাকে ঝাঁ চকচকে আধুনিক রূপ দিতে চাননি।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2024/01/3-7.jpg)
দোকানের কচুরি এবং ছোলার ডালের সুনাম সারা ব্যারাকপুরেই। ছোলার ডালের সঙ্গে দেওয়া হয় একটি চাটনি। এছাড়া, রয়েছে রাবড়ি। প্রতিদিনের ৩৫ থেকে ৪৫ লিটার দুধ দিয়ে তৈরি হয় রাবড়ি। তৈরি হতে সময় লাগে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা। রাবড়ির সুস্বাদ এবং ঘনত্বের জন্যই মানুষ ফিরে ফিরে আসেন। কচুরি হল কুড়ি টাকা প্লেট। এক প্লেটে থাকে চারটি কচুরিসহ ডাল। আর রাবড়ি বিক্রি হয় চল্লিশ টাকা শ দরে। সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত্রি সাড়ে দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে জলুয়ার মিষ্টির দোকান। দোকানের অবস্থান ব্যারাকপুর স্টেশনের ঠিক সামনেই।
Discussion about this post