আপনার কি সিগারেটের নেশা আছে? অথবা আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, একটা সিগারেটের ফেলে দেওয়া অংশ থেকেও উপযোগী কিছু তৈরি করা যেতে পারে? তাহলে খোলসা করেই বলা যাক। সারা পৃথিবীতে একবছরে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ কোটি বা ৪.৫ ট্রিলিয়ন সিগারেট বাট ফেলা হয়। অর্থাৎ সিগারেট বাট হল পৃথিবীতে সবথেকে পরিত্যাজ্য বস্তু। কিন্তু জানেন কি, এই ছোট্ট সিগারেট বাটটি পচতে দশ বছর সময় লাগে! হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন; দশ বছর! কেউ এ ব্যাপারে কখনও কিছু ভাবেননি। কিন্তু ভেবেছেন একজন। নয়া দিল্লির নমন গুপ্তা। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য তিনি শুধু ভাবেননি, বরং সমাধানের পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/06/16d4a229-4d38-430d-b5cc-d1a50c69e407-min.jpg)
নমন এই সিগারেট বাটগুলিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য ভেবেছিলেন। কিন্তু কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। সিগারেট বাট সংগ্রহ করাটাই ছিল বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। তাই তিনি সবার আগে তৈরি করলেন ‘ভ্যালু বিন’ বা ‘ভি-বিন’। এই ভ্যালু বিন তুলে দেওয়া হল সিগারেটের বিক্রেতাদের হাতে, যাতে সিগারেট ফিল্টার সংগ্রহ করা যায়। অর্থাৎ, সিগারেট খেয়ে তা ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে মানুষ এই ভ্যালু বিনে জমা করতে থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ধারণা থেকেই ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘কোড এফোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড’, যা ভারতের প্রথম সিগারেট রিসাইক্লিং ফার্ম। এরপর এই সংগৃহীত সিগারেট ফিল্টারগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। পেপার বা কাগজ ও ফাইবার বা তন্তু। কাগজের সঙ্গে জৈব যৌগ মিশিয়ে তৈরি করা হয় মশা মারার ধূপ। কিন্তু ওই বিষাক্ত তন্তু?
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/06/2d3cb33a-b868-4c6e-865d-cbd92c5c7de4-min.jpg)
অনেক গবেষণার পর নমন একটি রাসায়নিকের সন্ধান পান, যা দিয়ে এই তন্তুর বিষাক্ত ভাব দূর করা যায়। ফলে সেগুলি ব্যবহারযোগ্য হয়ে যেতে পারে। তারপর একটি গবেষণাগারে পরীক্ষা করে সেই বিষহীন তন্তু দিয়ে নানা ধরণের আকর্ষণীয় পণ্য সামগ্রী তৈরি করা হয়। যেমন গদি, বালিশ, বাচ্চাদের সোফা, পুতুল, কি-চেন ইত্যাদি। ভবিষ্যতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই বায়ু শোধন পদ্ধতি বা চশমার ফ্রেম তৈরি করার চিন্তাভাবনাও রয়েছে নমনের। আরও কীভাবে এগুলির উপযোগিতা বাড়ানো যায়, তাও ভাবছেন নমন।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/06/0e2e2e0b-09d7-4b2f-af6d-8d5fd0e757b3.jpg)
এখনও পর্যন্ত নমন পঁচিশ কোটিরও বেশি সিগারেট বাটকে রিসাইক্লিং করেছেন। শুধু তাই নয়, অনেক মানুষের উপার্জনের ব্যবস্থাও করেছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘কোড’। এই সংস্থা নিয়মিতভাবে তাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে সিগারেটের বর্জ্য নেয়৷ সেই গ্রাহকরা এর বদলে টাকাও পান। প্রতি এক কিলোগ্রাম সিগারেটের বর্জ্যের জন্য কোড দেয় ৭০০ টাকা এবং প্রতি ১০০ গ্রামের জন্য ৮০ টাকা৷
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/06/397549be-1950-4f2f-9bf4-2a75097d064c.jpg)
‘কোড’- এর মতে, প্লাস্টিক নয়। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দূষক হল এই সিগারেট বাট বা সিগারেটের বর্জ্য। আর এই বর্জ্যের সঠিক ব্যবহার কীভাবে সম্ভব, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ এখন আপনাদের সামনে। আসলে কখনও কখনও আমরা আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি, যে সমাধান বের করতেই চাইনা। আমাদের মনে হয়, আমাদের ছোট্ট একটা পদক্ষেপে কীই বা হবে। কিন্তু নমন গুপ্তার মানুষরাই এই ছোট পদক্ষেপটা ওঠান আর পৃথিবী বদলে ফেলার চিন্তা করেন।
Discussion about this post