রথযাত্রা মানেই কবিগুরুর লেখা সেই লাইন “রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধূমধাম, ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।” প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় রথযাত্রকে ঘিরে তৈরি হয় উৎসবের মহল। বাদ যায় না হাওড়ার সাঁকরাইল এলাকার শুলাটির ঘোষ বাড়ির বিখ্যাত রথযাত্রা। প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন জমিদার ঘোষ বাড়ির ঐতিহ্যবাহী রথ। জমিদারি আমলে এই রথের চাকচিক্য ছিল একেবারে চোখ ধাঁধানো। নেই আর সেই জমিদারি, কিন্তু তবুও ঐতিহ্য মুছতে দেয়নি বংশধরেরা। তাদের হাতেই গড়ায় রথের চাকা। আজও জগন্নাথ,বলরাম, সুভদ্রাকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয় কাঁঠাল, জিলিপি, পাঁপড় ভাজা সহ আরও কত কি!
পেরিয়েছে দুশো বছর। সেযুগে রথের আগের দিন থেকে ঘোষ বাড়ির ঠাকুরদালানে উল্টো রথ পর্যন্ত ৯ দিন ধরে চলত অন্নভোগ অর্থাৎ নারায়ন সেবা। সেই সঙ্গে ছিল বিভিন্ন আয়োজন। জমিদার বাড়ির রথ উপলক্ষে শুলাটি মাঠে প্রতিবছর মেলার আসর বসত। সে সময়ে চারাগাছ, পাকা কাঁঠাল, মাটির খেলনা, বাঁশের তৈরি ঝুড়ি চুবড়ি, জিলিপি ,পাঁপড়ভাজার দোকান বসত। আর পুতুল নাচের আসর। ভক্তদের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মত। এই ন’দিন ধরে চলত সার্কাস, পুতুল নাচ, যাত্রাপালা আরও নানা অনুষ্ঠান। জানা যায়, হুগলীর মাহেশের রথের মতই বিখ্যাত ছিল শুলাটি ঘোষ বাড়ির রথ।
কালের নিয়মে ফিকে হয়েছে জমিদারি আমলের আভিজাত্য। তবে এখনও জমিদার বাড়ির সদস্য এবং সেইসঙ্গে রথের দড়িতে টান দেয় গ্রামবাসী। প্রতি বছর রথের আগে জোরকদমে চলে প্রস্তুতি। আজও নয় দিন ধরেই চলে শুলাটি মাঠের রথের মেলা। এই মেলার মূল আকর্ষণ হল মাটির পুতুল ও মাটির খেলনা এবং চারা গাছ। সঙ্গে রয়েছে জিলিপি, পাপড়, পেয়াজি, কাঁঠাল। মেলায় ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টি দোকান বসে। তবে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত মাটির খেলনা বা চারা গাছের পসরা বসত অনেক। বিকেল থেকেই শুরু হয়ে যায় কেনাবেচা। পুরুষ মহিলা সকলে মেলায় মাটির হাড়ি, কড়াই, উনুন, শিল, নোড়া, হাতা, খন্তি, মাটির পুতুল এবং মাটির তৈরি মূর্তি নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন।
ঘোষ জমিদার বাড়ির একজন সদস্য জানান যে শুলাটি ঘোষ বাড়ির রথের মেলার ঐতিহ্য হল মাটির খেলনা এবং চারা গাছ। এর টানেই মানুষ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন মেলা দেখতে। ক্রেতাদের চাহিদায় অবশ্য বিশেষ ভাটা পড়তে দেখেননি বিক্রেতারা। এখন মেলার আসরে দেখা মেলে প্লাস্টিকের খেলনা সরঞ্জামের-সহ বাহারি খাবারের স্টলেরও। কয়েকদিন ধরেই রথের মেলায় গঙ্গাধরপুর, জয়নগর, সন্ধিপুর, ধূলাগড় সহ বিভিন্ন গ্রামের হাজারও মানুষের ভিড়ে গম গম করে শুলাটির মাঠ।
Discussion about this post