খাদ্যরসিক বাঙালি আর যাই ছেড়ে থাকুক না কেন, মিষ্টি ছাড়া তাদের একেবারেই চলে না। এই মিষ্টি নিয়ে তাই ময়রারা অনেক সময়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেও ছাড়েন না। কিন্তু তাই বলে একেবারে চ্যাপ্টা রসগোল্লা! এও কি সম্ভব? আজ্ঞে হ্যাঁ মশাই, রসগোল্লার আকার এখানে গোল্লা নয়, বরং চ্যাপ্টা। নবীন ময়রার অমর সৃষ্টিকে একটু অন্য ধাঁচে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে কালীঘাট মন্দিরের কাছেই দেবনারায়ণ লেনে রয়েছে প্রায় ১৪০ বছরেরও বেশি পুরনো হারান মাঝির মিষ্টির দোকান। কালীঘাট চত্বরে স্থানীয়রা কম বেশি সকলেই এক ডাকে চেনেন হারান ময়রার মিষ্টির দোকান বলে। আর এখানেই মেলে স্বাদে অতুলনীয় এবং অন্যতম বিখ্যাত এক নজির সেই চ্যাপ্টা রসগোল্লা!
প্রতি পিস মাত্র দশ টাকা। আমাদের রসগোল্লার মত দেখতে না হলেও এই মিষ্টি বানানোর পদ্ধতি বা উপকরণ –কোনোটাই কিন্তু আলাদা নয়। এমনকি রসে ফুটিয়েই তৈরি করা হয় এই মিষ্টি। শুধুমাত্র গোল না করে চ্যাপ্টা করা হয়। সেই কারণেই এটি চ্যাপ্টা রসগোল্লা নামেই বেশ পরিচিত। তবে একটা পোশাকি নাম আছে বটে, ক্ষীরমোহন। অনেক দুরদুরান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন এই ক্ষীরমোহনের টানে। প্রায় প্রতিদিনই ২০০ পিস করে এই মিষ্টি বিক্রি হয়। অনেকে আবার এই মিষ্টি দিয়েই কালীঘাটে মায়ের মন্দিরে পুজো দেন।
শুধুমাত্র ক্ষীরমোহন বলে নয়, হারান মাঝির এই মিষ্টির দোকানের প্রত্যেকটি মিষ্টি স্বাদে এক কথায় অতুলনীয়। শতাব্দী প্রাচীন এই মিষ্টির দোকানের প্রতিষ্ঠাতা হারান মাঝি ছিলেন আসলে হাওড়ার দেউলটির বাসিন্দা। তিনি এই দোকান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কালীঘাট মন্দিরের পিছনে। আর সেই থেকেই এই দোকানকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে দোকানের কর্ণধারেরা হলেন তাঁর দুই বংশধর বুবাই মাঝি ও রাজু মাঝি। জানা যায়, হারান মাঝি একবার কালীঘাটের মা কালি-র থেকে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন ভোগে মিষ্টি তাঁর দোকান থেকেই মিষ্টি পাঠানোর জন্য। সেই থেকে এই দোকানের মিষ্টি নিবেদন করা হয় মায়ের ভোগে। বলতে গেলে, এই দোকানের সুস্বাদু মিষ্টি খেয়েই নাকি মা শয়নে যান।
এভাবেই চার পুরুষ ধরে দোকানের হাল সামলাচ্ছেন বর্তমানের বংশধররা। কোনো চাকচিক্য ছাড়াই পুরনো আমলের অন্দরসজ্জার ছোঁয়া রয়েছে এই দোকানে। তবে পোশাকি নামের মতই প্রচারের আলো ছুঁতে পারেনি পুরনো আমলের এই মিষ্টির দোকানে। কিন্তু এত বছরেও মিষ্টির স্বাদের সঙ্গে কোনো আপোস করেননি কারিগররা। এখানকার মিষ্টি শুধু সুস্বাদুই নয় একেবারে টাটকা। তাই একবার যারা খোঁজ পেয়েছেন কলকাতার বুকে প্রতিষ্ঠিত এই অমূল্য রত্নের থুড়ি মিষ্টির দোকানের, এককথায় তাদের পক্ষে এজন্মে সেই স্বাদ ভোলার নয়!
প্রচ্ছদ চিত্রঋণ – দৃষ্টিভঙ্গি
Discussion about this post