বাবা: অ্যানুয়াল পরীক্ষা তো শেষ, এবার শীতে তোদের নিয়ে সার্কাস দেখতে যাব। কি রে যাবি তো?
বাচ্চারা: কী মজা! আমরা সার্কাসে যাব!
আশি বা নব্বই দশকের শিশুদের কাছে ‘সার্কাস’ শব্দটার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ফেলে আসা শৈশবের রঙ বেরঙের নানান স্মৃতি। চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিভিন্ন পশু পাখিদের সেই আশ্চর্য সব খেলা দেখানো। শীতের মরশুম যেমন পিকনিক ছাড়া জমে না তেমনই এই সার্কাসও ছিল মরশুমের গুরুত্বপূর্ণ একটা অঙ্গ। ডিসেম্বরের শহর তখন শুধু আলোর রোশনাইতেই নয়, সেজে উঠত বিভিন্ন জায়গার সার্কাসের তাঁবুতেও। পরিযায়ী পাখির মতন শীতে সারা দেশের সার্কাসের দল এসে তাঁবু ফেলত কলকাতার পার্ক সার্কাস, মার্কাস স্কোয়্যার, টালা পার্ক, সিঁথির মোড়ের বড় বড় ময়দানগুলিতে। এক অন্য আমেজের রচনা করত সেইসব সার্কাসের দল। কিন্তু এখন আর সেই সার্কাসও নেই আর না আছে দেশ বিদেশের সেসব দল!
সেই চেনা ছবি কবে যে ধীরে ধীরে বদলে গেছে তা হয়তো আমরা টেরও পাইনি। আর হবে নাই বা কেন? এখন আমাদের কাছে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে টিভি ও তাতে বিভিন্ন রিয়েলিটি শো রয়েছে, নিত্যনতুন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সর্বোপরি স্মার্টফোনের এই জনপ্রিয়তা চুরি করেছে এখনকার অধিকাংশ বাচ্ছাদের সুন্দর শৈশবটাকে। আর এসবের মধ্যে সবথেকে বড় ক্যাটালিস্ট হল কুড়ি সালের ভয়ংকর সেই কোভিড পরিস্থিতি। সব হাতছানিকে উপেক্ষা করে যে কয়েকটা জায়গায় সার্কাস শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল, তাও সন্মুখীন হয়েছে ধ্বংসের পথে।
এখনকার প্রজন্মের কেউই সার্কাস দেখার কথা মনেই আনতে পারবেন না। জনপ্রিয় সার্কাস শো দেখার জন্য সারাবছর অপেক্ষা করে থাকা যুবক-যুবতীর দল আজ বৃদ্ধ হয়েছেন। সময় বদলেছে। সাথে বদলে গেছে মানুষের রুচি ও চাহিদা। শীতের শহরে এখন রয়েছে ক্রিসমাস পার্টি, নিউ ইয়ার পার্টি। বাইরে যেতে না চাইলে লেপের তলায় পপকর্ন নিয়ে নতুন ওয়েব সিরিজ দেখা তো রয়েইছে! এসব বিলাসিতার মাঝে শতাব্দী প্রাচীন সার্কাস শিল্প এখন হারানো নস্টালজিয়া ছাড়া আর কি!
Discussion about this post