আবহাওয়ার হিসেবে এখন সারা বছরই বর্ষা। বছর ভর টিপটিপ বা ঘন ঘোর ঝমঝম! সোজা কথায় বৃষ্টির আনাগোনা প্রায় বারো মাসই। এবারে বর্ষাও এসেছে একদম নিয়মমাফিক আষাঢ়ের শুরুতেই। তাই টিপটিপ হোক বা ঝমঝম, সারাদিনের বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে আমাদের একমাত্র ভরসার কাঁধ ছাতা এবং রেনকোট। আর রেনকোট বলতেই বাঙালি যাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারে, তা হল ড্যাকব্যাকের রেনকোট। সেই অতীত থেকেই বাঙালির অন্যতম পছন্দের তালিকায় রয়ে গিয়েছে এই ড্যাকব্যাকের তৈরি রেনকোট। বর্তমানেও একচুল কমেনি তার চাহিদা। বরং উত্তরোত্তর তা বেড়েই চলেছে। তবে স্বভাবতই মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, ঠিক কার চিন্তার ফসল এই ড্যাকব্যাক? নামটা ইংরাজি হলেও শুনলে অবাক হবেন যে ড্যাকব্যাকের পিছনের ইতিহাস নিজের হাতে লিখেছিলেন যিনি, তিনি আদপে পুরোদস্তুর এক বাঙালি। সেই বাঙালির নাম সুরেন্দ্রমোহন বসু।
ড্যাকব্যাক তৈরির পিছনে রয়েছে এক অদম্য জেদ ও ইচ্ছাশক্তির মিশেল। যুবক বয়সে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়েছিলেন সুরেন্দ্রমোহন। তবে আর পাঁচ জনের মত ইংল্যান্ডে নয়, বরং আমেরিকাতে। ভারতে তখন ব্রিটিশ রাজ। ব্রিটিশদের প্রতি তীব্র আক্রোশেই ইংল্যান্ড যাননি তিনি। শিক্ষার পর দেশে ফেরেন তিনি। ঠিক তার পরই ব্রিটিশের রোষে পড়ে জেল হয় তাঁর। তাঁকে চালান করা হয় উত্তরপ্রদেশের এক জেলে। জেলে বসেও এতটুকু হাল ছাড়েননি সুরেন্দ্রমোহন। সেই জেলের মধ্যেই তিনি বানিয়ে ফেললেন নতুন কিছু আবিষ্কারের এক ফর্মূলা। আর জেল থেকে ছাড়া পেতেই জন্ম দিলেন এক ইতিহাসের। সালটা ১৯২০। ব্রিটিশদের চ্যালেঞ্জ করেই নিজের ফর্মূলা এবং ভাইদের সাহায্যে, বিশেষ কিছু ‘ওয়াটার প্রুফ’ জাতীয় বস্তু কাজে লাগিয়ে বানিয়ে ফেললেন রেনকোট। পরবর্তীতে যা ‘ড্যাকব্যাক’ রেনকোট নামে পরিচিত হয়।
১৯৪০ সালে ড্যাকব্যাকের নতুন নামকরণ হল। ‘বেঙ্গল ওয়াটারপ্রুফ লিমিটেড’ নামে নতুন সংস্থার গঠন হল। তবে মানুষ আজও মনে রেখেছে সেই পুরোনো ডাকব্যাককেই। কারণ একটাই। এই রেনকোটকে চোখ বন্ধ করেও বিশ্বাস করা যায় যে। শুধু রেনকোটেই সীমাবদ্ধ নয় এই প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তাঁদের স্কুল ব্যাগ কিংবা জুতোর চাহিদাও তুঙ্গেই বলা চলে। গুণগত মানের দিক থেকে আজও অন্যতম সেরা ডাকব্যাক, উপরি পাওনা টেকসইও। তাই সাধারণ মানুষের ভরসার প্রতীকও সেটি। ১৯২০ সালে সুরেন্দ্রমোহনের নিজের পৈতৃক বাড়িতে গড়ে ওঠা ডাকব্যাক আজ একশো বছরে পা দিল। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে তাদের অসংখ্য শাখা। এক সময় সাধারণ বাঙালি যে ব্যবসায়িক বুদ্ধি দেখিয়ে গড়ে তুলেছিলেন এই সংস্থা, তা রমরমিয়ে চলছে আজও। এরপরও কে বলে বাঙালিরা আজও পিছিয়ে?
Discussion about this post