সামান্য চিনির ডেলা, কিন্তু মুখে দিলে অমৃত। শুনতে সামান্য হলেও ব্যাপারটা আসলে অসামান্য। চিনির সাথে ছানার মেলবন্ধন। আহা সে এক অপূর্ব স্বাদ। কথা হচ্ছে শান্তিপুরের নিখুঁতির, যা কিনা আঞ্চলিক লোক থেকে সাহেবদের পর্যন্ত মন কেড়ে ছিলো। ভুলের বশে তৈরি হওয়া এই মিষ্টি আজও বাঙালির মিষ্টান্নের তালিকায় তার জায়গা ধরে রেখেছে।
দেখতে কিছুটা ল্যাংচার মতো, তবে আকারে ছোটো এই মিষ্টি। অনবদ্য এই মিষ্টি তৈরির ইতিহাস জানতে গেলে কিছুটা সময় পিছিয়ে যেতে হয়। শান্তিপুরে গো-ভাগাড়ে ছিলো ইন্দ্র ময়রার দোকান। কেউ আবার বলেন ভোলা ময়রা। তার মেয়ের নিখুঁত সুন্দর রূপ হওয়ার জন্য নাম ছিলো নিখুঁতি। তো একদিন তিনি মেয়েকে দোকানে বসিয়ে কোথাও একটা গেছেন। আর সেই সুযোগে মেয়ে তেলে মাখা ছানা লম্বা লম্বা করে কেটে কড়াইতে ছেড়ে দিলো। তার পর ভয়ে তা তাড়াতাড়ি তুলে ডুবিয়ে দিলো রসে। দোকানে ফিরে বাবা তো রেগে আগুন। তবে ব্যবসায়ী মন, তাই ওই মিষ্টি পরিচিতদের কাছেই বিক্রি করে দেওয়া হলো।
পরদিন সকালে এক ক্রেতা এসে জানতে চান মিষ্টির নাম কি। ভোলা ময়রা কানে কম শোনায় ভাবলেন, কে তৈরি করেছে সেটা জানতে চাওয়া হচ্ছে। উত্তর দিলেন, নিখুঁতি। ব্যস, সেই থেকেই নামকরণ হয়ে গেলো। দেখতে দেখতে এই মিষ্টির বয়স প্রায় দুশো বছরের। সেই সময়টা ছিল ১৮৫৬ র কাছাকাছি।
শান্তিপুরের নিখুঁতি ছিলো স্যার আশুতোষের প্রিয় মিষ্টির তালিকার এক নম্বরে। ভোলা ময়রার দোকান এখন আর নেই। কিন্তু এ মিষ্টি এখনও সমান জনপ্রিয়। কড়া করে ভেজে হালকা রসে ডুবিয়ে, গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে পরিবেশন করা হয় নিখুঁতি। তবে কাশ্যপ পাড়ার কাছে গোস্বামী বাড়ির সংলগ্ন এলাকায় পশু ময়রা এখনো সেই ঐতিহ্য বয়ে চলেছে।
Discussion about this post