সমস্ত পুজো মোটামুটি কেটে যাবার পর ‘শহর জুড়ে যেন শীতের মরসুম’। তবে শুধু কি শহর? শীতের সাজে আগে সেজে ওঠে গ্রামগুলো। আর শীত বলতে আরও যা মনে আসে তা হল নলেন গুড়। এই গুড় ভালোবাসে না এমন বাঙালি মেলা ভার। তবে জানেন কি এই গুড় ‘নলেন গুড়’ হয়ে উঠলো কী করে?
খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি হয় একথা কম বেশি সবারই প্রায় জানা। তবে সে গুড় তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে হয়তো সকলে অবগত নন। প্রশ্ন হল, খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড়ের নাম নলেন গুড় হল কীভাবে! উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, এই শব্দের সাথে দ্রাবিড় সভ্যতার যোগ আছে। দক্ষিণ ভারতে এ শব্দের ব্যবহার ছিল। বাংলা-দ্রাবিড় অভিধানে ‘ণরকু’ শব্দের অর্থ হল ছেদন করা বা কাটা। অন্যদিকে, হরিনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ অভিধান মতে নরুন বা নরশনি মানেও ছেদন করা বা কাটা। এই নরুন আসলে নাপিতের ক্ষৌর অস্ত্র।
তবে খেজুর গাছে এই অস্ত্রের ব্যবহার করা হয় অন্যভাবে। গুড় প্রস্তুতকারীরা প্রথমে দা দিয়ে গাছের গায়ে উপরের দিকের কিছুটা অংশ চেঁছে দেয়। তারপর নরুন দিয়ে ফুটো করে দেওয়া হয় সেই স্থান। তার থেকে রস চুঁইয়ে চুঁইয়ে হাঁড়িতে পড়ে। আবার কখনও নরুনে ফুটো করে সেখান থেকে একটা বাঁশের ছিলা লাগিয়ে দেওয়া হয় হাঁড়ি পর্যন্ত। এই পদ্ধতিতে নল দিয়ে রস চুঁইয়ে পড়ে হাঁড়িতে। সেই থেকে নলেন গুড় নামের উদ্ভব হতে পারে বলে ধরে নেওয়া হয়।
এভাবে সমস্ত রস একত্র করে বড়ো পাত্রে ফোটানো হয়। ফুটিয়ে ফুটিয়ে ধীরেধীরে রস থেকে প্রস্তুত করা হয় গুড়। বিভিন্ন গুড় বিক্রেতারা নভেম্বর মাসে এসে প্রথমেই খেজুরগাছ সমৃদ্ধ কোনও ডাঙা জায়গাকে বেছে নেন। বিশেষত পুকুরপারের পাশে কোনও ডাঙাকে। গাছ নির্ধারন করে তারা লেগে পড়েন গুড় তৈরির কাজে। গুড় প্রস্তুত হলে বিক্রি শেষে মার্চ মাস নাগাদ শীতের দিন শেষ হলে তারা ফিরে যান নিজেদের জায়গায়। গুড় বিক্রেতাদের জীবনের এই অংশটা পরিযায়ী পাখিদের মত। তবু শীতের দিনে গুড়ের স্বাদ পাই একমাত্র তাদের জন্যই।
Discussion about this post