শীতকাল মানেই নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার। যেমন ধরুন ফুলকপি-বাঁধাকপির তরকারি, নানারকমের পিঠে-পুলি, কড়াইশুঁটির কচুরি, নতুন আলুর দম, আরও না জানি কত জিভে জল আনা খাবার! তাই তো ভোজনরসিক বাঙালি সারাবছর অপেক্ষা করে থাকে শীতকাল আগমনের। তবে যেটিকে বাদ দিয়ে বাঙালীর শীতকাল প্রায় অসম্পূর্ণ, সেটি হল গুড়। খেজুরের রস থেকে তৈরি হওয়া গুড়টি খেজুর গুড় নামে পরিচিত। স্বাদ আর মানভেদে খেজুরের গুড় পাটালি, নলেন গুড়, হাজারী গুড় নামে পরিচিত। যার মধ্যে অন্যতম নলেন গুড়, যা স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। কেউ কেউ মনে করেন নল দিয়ে রস চুঁইয়ে পড়ে বলেই ‘নলেন’ নামের উদ্ভব। এই নলেন গুড়ের কথা উঠলে প্রথমেই মনে আসে বর্ধমানের পূর্বস্থলী-২ ব্লকের পাটুলির কথা।
পাটুলি স্টেশন সংলগ্ন বাজারেই রয়েছে নলেন গুড়ের এক বিশাল পাইকারি বাজার। রেলের কাটোয়া-হাওড়া শাখায় পাটুলি রেলস্টেশনের পাশেই এই পাইকারি বাজারে ১৫টি আড়ত রয়েছে। সন্ধ্যা নামলেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে এই বাজার। রাত ১০টা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের থেকে জানা যায়- এখানকার নলেন গুড় যায় কলকাতা, হাওড়া, দুর্গাপুর, আসানসোল, চুঁচুড়া সহ বিভিন্ন এলাকায়। শীতের মরশুমে প্রতিদিন এখানে লক্ষ লক্ষ টাকার নলেন গুড় বিক্রি হয়। যার অধিকাংশ জোগান আসে নদীয়া জেলা থেকেই।
পাটুলি রেলস্টেশনের পাশে ৩০ বছর আগে নলেন গুড়ের আড়তে কেনাবেচা শুরু হয়। তার আগে এই আড়ত ছিল পাটুলি তহবাজারের কাছে। বর্তমানে রেলস্টেশনের পাশে আড়ত হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধা হয়েছে। এখানে আড়তে নলেন গুড়ের বিভিন্ন ধরনের দেখা মেলে। যেমন, থালাগুড়, বাটিগুড়, ঝোলাগুড়, দানাগুড় ও বেনালা গুড়। আড়তদারদের দাবি, এ বছর গুড়ের উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু সেই হারে দাম বাড়েনি।
পাটুলির এক আড়তদার জানান, “শিউলিরা ভোরের দিকে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। সেই রস উনুনে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করতে করতে বেলা ১০টা বেজে যায়। পাইকাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওই গুড় সংগ্রহ করেন। এরপর সব গুড় একত্রিত করে তাঁরা আমাদের আড়তে নিয়ে আসেন। আমদানির ওপর নলেন গুড়ের দাম ওঠা-নামা করে। রবিবার থালাগুড় ৫৫ টাকা, বাটিগুড় ৬২ টাকা, ঝোলাগুড় ৫২ টাকা থেকে ৭০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হয়।” বাজার থেকে আনা গুডটা পিঠে করে খাওয়া হবে, না পায়েস করে। বাঙালির এই গৃহযুদ্ধ না মিটলেও একথা বলাই যায় গুড়হীন বাঙালির শীতকাল কাটানো অসম্ভব। তাই পূর্বস্থলীর কাছাকাছি এলে একবার দেখে যেতেই পারেন এই বিশাল গুড়ের আড়ত।
Discussion about this post