“পান্তুয়ার ভাইটি ,লজ্জায় রঙ লালটি।” আদরের মোহন । পরিচয়পত্রে অবিশ্যি নাম লালমোহন , ঠিকানা ফুলবাড়ী এবং জনক মণীন্দ্রনাথ ঘোষ। এই যে দুগ্গা মায়ের কৈলাস যাত্রার আয়োজন চলছে আর একদিকে মর্ত্যবাসীর মনে বিষাদ ইতি উতি মারছে। বিসর্জন শেষে বিজয়া দশমী, মন খারাপের ভিড়েও একটু খানি মিষ্টি মুখ যে করতেই হয়। এই নাড়ু-মোয়া-মুড়কির ভিড়ের মাঝে লাল জামা পরা রসালো লালমোহন। মুখে দিতেই গলে যায়। আহা! মিষ্টান্ন নিয়ে বাঙালির হরদম অভিনব উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ার এক সুস্বাদু লোভনীয় ফলাফল।
লালমোহন দেখতে একদম পান্তুয়ার মতোই। তবে দেখতে এক হলেও এতে খোয়া ক্ষীরের পরিমাণ খানিকটা বেশি। ফলে এ তুলনায় খানিক বেশি নরম। খোয়া ক্ষীর,ছানা আর ময়দার সংমিশ্রণে তৈরী লালমোহনের সামনে বিশেষণের তালিকা বড়োই দীর্ঘ। কিন্তু এই অনন্ত বিশেষণে বিভূষিত মিষ্টি এল কোথা থেকে? সময়ের স্রোতে পিছিয়ে যেতে হবে খানিক।
মণি বাবুর আদি বাড়ি ঢাকার ময়মনসিংহে। এপার বাংলায় এসে তিনি ঠাঁই গোঁজেন শিলিগুড়ির ফুলবাড়ী এলাকায়। তারপর ধীরে ধীরে শুরু করেন মিষ্টির কারবার। ব্যবসায় গতি আনতে তিনি উদ্ভাবন করলেন এই নতুন রকম মিষ্টি। ভাগ্যের শিকেও ছিঁড়ল সাথে সাথে। এই নতুন মিষ্টির নাম দিলেন ‘লালমোহন’। ফুলবাড়ীর মিষ্টি সাম্রাজ্যের অবিংসবাদী দাপুটে সম্রাট।রাজগঞ্জের ৩১ নং জাতীয় সড়কের পাশে আজও আছে মণি বাবুর দোকান। ‘ফুলবাড়ী মিষ্টান্ন ভান্ডার’। সেই দোকানে লালমোহনের সন্ধানে হাজির হয়েছিলেন স্বয়ং কিশোর কুমার থেকে মান্না দে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, বাপ্পি লাহিড়ী, সব্যসাচী চক্রবর্তী সকলেই একবার না একবার হানা দিয়েছেন লালমোহন আস্বাদনের অভিপ্রায়ে। তাদের স্বাক্ষর এখনো সুন্দর করে কাঁচবন্দি রয়েছে দোকানেই। আবার কেউ কেউ তাতে জুড়ে দিয়েছেন দু-চার লাইন। তবে এখন দোকান সামলান মনীন্দ্রনাথ ঘোষের পুত্র রতন ঘোষ। উৎসবের মরশুমে এই মিষ্টির চাহিদা তুঙ্গে ওঠে। তবে ফুলবাড়ীর এই মৌলিক সৃষ্টির জি.আই স্বীকৃতি মিললে মিষ্টির কদরের পরিসীমা আরও খানিক বাড়ত।
তা সে কোনো পালা পার্বণ থাকুক বা না থাকুক একবারটি ঢুঁ মারাই যায় দোকানটিতে। লালমোহনের মায়াজালে আবদ্ধ হওয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকাও তো দরকার নাকি!
Discussion about this post