বাঙালির কাছে ইলিশ মহারানীর নাম বেশ উৎসবের মতো। একসময় মাছে ভাতে বাঙালির জন্য এই মাছ খুব সহজলভ্য ছিল। তবে কালের পরিবর্তে এখন ইলিশ হয়েছে দুর্লভ। প্রায় ৫০ ধরনের ইলিশের পদ বাংলায় প্রচলিত। পোস্ত/ সর্ষে/ দই বিভিন্ন কিছু দিয়ে রান্না হলেও হালকা মাছের ঝোলের স্বাদই অন্যরকম। বাড়ির ঠাকুমা দিদারা এখনো বলেন ইলিশ তো জলে ফেললেও স্বাদ। এই মাছ হালকা ভাবে রান্না করা হলে এর আসল স্বাদের কোনো তারতম্য হয় না।
কলকাতার সহেলী বিশ্বাস জানিয়েছেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। ইলিশ মাছ মিষ্টি কুমড়ো দিয়ে। আবার বাবার দেশের রান্না। আগে বাবা লেক মার্কেট বাজার থেকে ইলিশ কিনে আনতেন। বাবা বলতেন গোল পেটের রূপোলী ইলিশ পেটি গাদা হবে আলাদা। ইলিশ মাছ কিনলেই আমার বাড়ীতে এই ঝোলটা একদিন হবেই। বাংলাদেশের পাবনা জেলার রান্না এটা। ঝিঙে আর মিষ্টি কুমড়ো দিয়ে বানানো হয়। দারুণ স্বাদ। ইলিশটা না ভেজে কাঁচা ঝোলে দিলে স্বাদ আরও ভালো হবে।পশ্চিমবঙ্গের থেকে বাংলাদেশে ইলিশ মাছ বরাবরই সহজলভ্য। বঙ্গোপসাগরের থেকে পদ্মার ইলিশের জনপ্রিয়তাও বেশি। গ্রাম বাংলার সাধাসিধে দরিদ্র মানুষ জমিতে ফলা বিভিন্ন সবজি দিয়েই এই মাছ রাঁধতেন। তখন ইলিশের দাম ছিলো একদম হাতের নাগালে। লাউ, চালকুমড়ো, বেগুন, লাউ/পালঙের শাক, কচু/ কচু পাতা এরম আরও শাক পাতা দিয়ে বানানো পদই বাংলাদেশে বেশি জনপ্রিয়। দোপেয়াজা বা সরষে ইলিশ এসব পদের কাছে হার মানতে বাধ্য।
তবে এসব রান্নার উৎপত্তিস্থল নিয়েও বাংলাদেশে রয়েছে বেশ মতবিরোধ। বর্তমানে কুষ্টিয়ার পদ্মায় ইলিশ বিলুপ্ত। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শুরুতেও এই পদ্মায় ইলিশ রাজত্ব চালাতো। বর্ষার সময় কলো জিরে ফোড়ন দিয়ে মিষ্টি কুমড়ো ইলিশের তরকারি তখন থেকেই বেশ জনপ্রিয়। এই রান্নার শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশের পাবনা জেলার দিকে। আবার কুমড়ো একটু কাঁচা হলে তাতে ঝিঙে বড়ি দিয়েও বেশ টক মিষ্টি একটা পদ হতো। আবার যেমন কচু পাতা বা লাউ পাতায় মুড়ে পাতুরির প্রচলন শুরু হয় বরিশালের দিকে। আবার কচু আর নারকোল কোরা সহযোগে ইলিশ রান্নাও তারাই শুরু করেন। তবে বর্তমানে বরিশালের পদ্মা একচ্ছত্রভাবে ইলিশের আধিপত্য করছে। তাই সমস্ত ধরনের ইলিশের পদের কৃতিত্বও তারাই নিতে চায়। আবার শোনা যায় ডিমওয়ালা ইলিশের সাথে সুগন্ধি চাল মিশিয়ে ইলিশ পোলাও রান্না দিনাজপুরে শুরু হয়। তবে সেই নিয়েও সিলেট ময়মনসিংহে রয়েছে চরম বাকবিতণ্ডা। ঋতু এবং অনুষ্ঠান বিশেষে পুরো বাংলাদেশের একেক অঞ্চলে একেক ইলিশের পদ জন্ম নিয়েছে।
এবারে সে যেখানকারই যা পদ হোক না কেন, ইলিশ তো ভাবলেও স্বাদ। বাঙালির একান্ত ঐতিহ্য এই মৎস রানী। নদীমাতৃক দেশেও আজ ইলিশ ধরাছোঁয়ার বাইরে। রান্নার বৈষম্য করতে বাকি আছে শুধুই পুরোনো গল্প আর স্মৃতি।
চিত্র ও তথ্য ঋণ – বঙ্গ ভিটা
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – কুক প্যাড
Discussion about this post