মিষ্টিলোভী মানুষরা কেবল কাঁড়ি কাঁড়ি মিষ্টিই খান সেটা কিন্তু নয়। সুলভ দামে ভালো মান কোথায় পাওয়া যায় লক্ষ্য সেদিকেও থাকে। তো তেমনই এক দোকানের সন্ধান দেব আজ মিষ্টিপ্রেমীদের। যদিও উত্তর কলকাতার লোকদের কাছে এটা নতুন ব্যাপার নয়। কারণ দোকানটির প্রসিদ্ধতা কলকাতায় বেশ নজরকাড়া।
হেদুয়া থেকে বিধান সরণী ধরে হাঁটতে হাঁটতে হাতিবাগান মোড়। এরপর এগিয়ে যান স্কটিশ চার্চ স্কুলের কাছে। স্কুলের ঠিক উল্টোদিকে বিধান সরণী থেকে একটা সরু গলি ঢুকে গেছে ভেতরে। এটি হল ভীম ঘোষ লেন। এই লেন ধরে একটু এগোলেই চোখে পড়বে রকমারি মিষ্টির ভান্ডার। সাদামাটা ছোট্ট একটা দোকান। ঝিকিমিকি আলোর সেই সাইনবোর্ডও জ্বলে না এখানে। তাই দেখলে সাধারণ মনে হবেই। তবে ভেতরে ঢুকলে নিশ্চিৎ আপনার ভুল ধারণা এক্কেবারে ঘুচে যাবে। এটি হল কাশীনাথ পানের জনপ্রিয় মিষ্টির দোকান। এবার চলুন তো দেখি কি কি মিষ্টির বাহার রয়েছে এখানে?
পাঁচ থেকে সাত টাকার মধ্যে যেকটা মিষ্টি মিলবে তা খেলে আপনি ভুলতে পারবেন না। আর সবথেকে তাজ্জব ব্যপার হল এই মুদ্রাস্ফীতির যুগে এখানে তিনটাকারও সন্দেশ পাওয়া যায়। আর শুধু দাম কম নয় মিষ্টির মান কলকাতার নামীদামীদের সাথে রীতিমতো টক্কর দেওয়ার মতো। গুড়ের সন্দেশে ছানা আর গুড়ের যে কি অপূর্ব মিশ্রণ! আর এখানের মিষ্টি দই যদি একবার আপনার মুখে যায় তবে বারবার দই কিনতে ছুটতেও পারেন এই দোকানে। কারণ এখানের মিষ্টি দইতে সেই উগ্র মিষ্টতা নেই। আমাদের মনমতো হাল্কা মিষ্টির মিষ্টিদই। এছাড়া রাবড়ি আর রসমালাইয়ের প্রেমে যে কতজন পড়েছেন বলাই বাহুল্য। প্রতিদিন সন্ধ্যে সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে রসমালাইয়ের হাঁড়িটি নামে। আর তখনই দোকান জুড়ে সে কী ভীষণ ঠেলাঠেলি! অন্য সময়ের ভিড়টা আপনার সহ্য হলেও এইসময়য়ের ভিড়টা দেখলে আপনার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে।
প্রায় ১১৭ বছর হতে চলল এই দোকানটি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শুধু বিক্রেতা নয় খদ্দেররাও এগিয়ে নিয়ে চলেছে এটিকে। মিষ্টিমুখের সাথের সম্পর্কের মিষ্টতাটা আপনার দৃষ্টি টানবে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রকে ছাপিয়েছে ক্রেতা বিক্রেতাদের মধুর সম্পর্ক। শুধুই দর কষাকষি নয় চলে একে অপরের পারস্পরিক কুশল বিনিময়ও। তাই এই দোকানে ব্যবসার সাথে ভালোবাসা ও আবেগ জড়িয়ে বহু মানুষের। শতাব্দী প্রাচীন জনপ্রিয় এই দোকানটি বাংলার এক ঐতিহ্যও বটে। তাই ভবিষ্যতের পথে এই দোকানটির অস্তিত্ব থাকুক স্থায়ী হয়ে।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – সাগর সেন, প্রাঞ্জল মজুমদার আর সোমা মুখোপাধ্যায়
Discussion about this post