লাল পাহাড়ির দেশ,পলাশের বন। মহানগরের কাছে পুরুলিয়া যেন ব্যস্ত জীবনে এক মুঠো খোলা বাতাস। তার আছে অযোধ্যা-বড়ন্তী আর সারি সারি পলাশ গাছের হাতছানি, যার সম্মোহনে কবি মন আজও সাড়া দেয়। সেই সবই যেন চোখের ক্ষুধা নিবারণের সুষম খাদ্য। তবে এই পেটের ক্ষুধা আর মনের রসনা? পুরুলিয়া শূন্য হাতে ফেরায় না। নতুন স্বাদের এক মিষ্টি, ‘কস্তার লাড্ডু’ নিয়ে হাজির হয় সে।
মিষ্টির জগতে ‘কস্তার লাড্ডু’ নামটি শুনতে আমরা অনভ্যস্ত হলেও, এ যেন লাল পাহাড়ির সম্পূর্ণ নিজস্ব এক মিষ্টান্ন। এই লাড্ডুর যাত্রা সুদূর উত্তর থেকে মানভূমের মাটিতে। রাজকীয় ইতিহাসে মোড়ানো তার পথ। সেইসময় মানভূমের মাটিতে পঞ্চকোট রাজবংশের রাজত্ব। তারা তাদের রাজধানী রাকাব থেকে কাশীপুরে স্থানান্তরিত করে। ১৯০১ সালে সেখানকার মসনদে বসলেন জ্যোতিপ্রকাশ সিংহ দেও। মানভূম থেকে বাঁকুড়া, বর্ধমানের কিছু অংশ এবং রাঁচি। এই বিস্তীর্ণ এলাকায় তখন পঞ্চকোট রাজবংশের শাসন। রাজার আবার জঙ্গলে শিকারে বড়ই আগ্রহ। প্রায়ই বেরোতেন শিকারে। শিকারে নিয়ে যাওয়া সরঞ্জামের মধ্যে থাকত রাজার জন্য বিশেষ মিষ্টিও। কিন্তু জঙ্গলে মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বড়ই তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। রাজা রাজপরিবারের মোদককে এমন এক মিষ্টি তৈরীর নির্দেশ দিলেন যা জঙ্গলেও বেশিদিন টিকে থাকে। মোদক খোঁজ করতে থাকলেন এরকম এক মিষ্টির যা স্বাদেও জিভে লেগে থাকার মতো আবার টেকসইও বটে!
সেই মোদকের কিছু আত্মীয়-স্বজনের বাসস্থান ছিল আবার উত্তর প্রদেশে। তাদের কাছেও খোঁজ লাগালেন এমন এক মিষ্টির। তারা বললেন এমন এক মিষ্টি আছে বটে, দেখতে খানিক শুকনো হলেও খেতে ভারী ভালো! নাম ‘কস্তার মিঠাই’। লাড্ডুর মতো দেখতে। বাংলায় প্রবেশ ঘটলো সেই ‘মিঠাই’ এর। ময়দা, খোয়া ক্ষীর, ছানা, এলাচ, বাদাম, অল্প পরিমাণ চিনি আর খাঁটি ঘি এর সংমিশ্রণে তৈরি হল এই লাড্ডুর, বাংলায় যার নাম হল ‘কস্তার লাড্ডু’। রাজাও এই মিষ্টির স্বাদে মেতে গেলেন। আর এই মিষ্টি দুই সপ্তাহ পর্যন্ত টিকে থাকে। সব মিলিয়ে এই ফলাফলে রাজার মনও খুশি। এত দূর থেকে কস্তার লাড্ডু এলো তবে আজ সেই মিষ্টি দোকানে খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন। সেই মিষ্টি তৈরীর আসল প্রণালী জানতেন গুটি কয়েক ময়রাই। ফলে আসল কস্তার লাড্ডু হারাতে থাকল তার পথ। তবে আজও সেই মিষ্টি নিজরূপে হাজির থাকে কোনো কোনো দোকানে। সেখানকার মিষ্টি প্রস্তুতকারকরা আজও বাঁচিয়ে রেখেছে পুরুলিয়ার নিজস্ব এই ‘কস্তার লাড্ডু’কে।
Discussion about this post