আমাদের খুবই একটি প্রিয় খাবার মুরগীর মাংস। আহা! জিভে জল আনা কতই না রকমারি লোভনীয় তার পদ। কিন্তু ভাবুন এই মুরগীর মাংসই যদি হয় সম্পূর্ণ ধূসর কালো রঙের! না,না, আমি মুরগীর পালক, ঝুঁটি, পা কিংবা ডানার রং বলিনি একেবারেই। বলছি যদি মাংস, হাড় এমনকি রক্তটাও হয় ধূসর কালো। কী? রূপকথার কোনও প্রাণীর কথা মনে হচ্ছে? আজ্ঞে না, বাস্তবেও এরকম একটি প্রাণী রয়েছে এবং তা খোদ আমাদের দেশেই। নাম ‘কাদাকনাথ চিকেন’ যার মাংস, হাড় , রক্ত সবটাই কালো।
মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এলাকায় মূলতঃ ধর ও ঝাবুয়া এলাকাতে এবং রাজস্থান-গুজরাটের সামান্য কিছু জায়গা নিয়ে সেখানেই প্রতিপালন হয় এই প্রজাতির মুরগী। এটির মূল প্রজাতি ‘Ayam cemani’. সাধারণত ওই এলাকার আদিবাসী, উপজাতি ও নিতান্ত গরিব মানুষের ঘরে প্রতিপালিত হয় এই প্রাণীটি। এরূপ বিরল বৈশিষ্ট্য বলেই এলাকাবাসীর কাছে খুবই পবিত্র রূপে গণ্য হয় এটি। প্রতি দীপাবলিতে ‘মা কালী’র এর কাছে অর্পণ করা হয় বলে এর আরেক নাম ‘কালী মাস’। তবে বর্তমানে কাদাকনাথ চিকেনের চাহিদা আর জনপ্রিয়তা দেশ বিদেশ জুড়ে। শুধুই যে এর এই কালো রঙের বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষ এই চিকেন খোঁজেন তা কিন্তু নয়। এই মাংস হয়তো দৃষ্টি নন্দন নয় কিন্তু উপকারিতা অনেক।
যেখানে অন্য মুরগীর মাংসে প্রায় ১৩-২৫% ফ্যাট থাকে সেখানে এই মুরগীর মাংসে ফ্যাটের পরিমাণ মাত্র ০.৭৩-১.২৫%। তাই এটি খুবই স্বাস্থ্যকর এবং যৌবন ধরে রাখতেও এই মাংসের ভূমিকা অতুলনীয়। কিন্তু এই এটি সাধারণ মানুষের নাগালের অনেকটাই বাইরে, কারণ এর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭০০-১৫০০ টাকা প্রতি কেজি। এর রক্ত কালো হওয়ার কারণ হলো অতিরিক্ত পরিমান আয়রনের উপস্থিতি। এই মুরগীর ডিমের কথা না বললে তো ঠিক যেন “শেষ হইয়াও হইল না শেষ” হয়ে যায়। ডিমের বাইরের খোলসটি কুচকুচে কালো রঙের আর এই ডিমে প্রোটিনের মাত্রা প্রচুর যা মানুষের খাদ্য তালিকায় অনন্য জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু সাধারণের জন্য অবশ্যই এটিও খুব দামী, এর বাজারদর ৫০-৭৫ টাকা প্রতি পিস। এই বিরল ও রোমাঞ্চকর কাদাকনাথ মুরগী আরও বেশ কিছু জনপ্রিয় নামেও পরিচিত। প্রাইড অফ ঝাবুয়া কিংবা ব্ল্যাক গোল্ড নামেও অনেকে চেনেন।
Discussion about this post