কেষ্ট পুজোর থালা থেকে বাঙালির হৃদয়, এ মিষ্টি মিশে বাঙালির আবেগে। কথা হচ্ছে নকুলদানার। চিনির তৈরি এ মিষ্টি আকারে ছোটো ও গোল দেখতে। অনেক সময়ে মাঝে খাঁজ কাটা থাকে। এই মিষ্টির সাথে পরিচয় হয়নি এমন বাঙালি খুঁজতে গেলে দূরবীন নিয়ে বসতে হবে। কিন্তু জানেন কি এই নকুলদানার উৎপত্তি কী করে? নকুলদানার জন্ম ঠিক কবে তা জানা যায়নি। তবে এর উল্লেখ মহাভারতেও পাওয়া যায়। শোনা যায়, পঞ্চপাণ্ডবের চতুর্থ ভাই নকুল খাবার নিয়ে গবেষণা করতে ভালোবাসতো। তিনি খইকে চিনির রসে ডুবিয়ে স্বাদ নিতে গেছিলেন। সেই স্বাদ পাওয়ার পর অসম্ভব ভালো লেগে যায় তার। আর সেই থেকেই এ মিষ্টির নাম হয়ে যায় নকুলদানা।
নকুলদানা কিন্তু একেবারে বৈষ্ণব মিষ্টি। বৈষ্ণব পদাবলী, চৈতন্য চরিতামৃত থেকে রাধিকার শতনাম গীতাঞ্জলির নানা আচারে কাঁসার বাটিতে নকুলদানা নিবেদনের খুঁটিনাটি রয়েছে। ওড়িশার শ্রীপটের রাধাকৃষ্ণ থেকে মল্লিকদের গৃহদেবতার নিত্যসেবায় অতিআবশ্যিক এ মিষ্টির জায়গা পাকা। জগন্নাথের নিদ্রাভঙ্গে বাল্যভোগে মাখন-মিছরিযোগ হোক বা তারপরে জলপানি ভোগ, রুপোর পাত্রে পান-সুপুরি-ছোলা-আদা-মিছরির সঙ্গী নকুলদানা থাকবেই। আবার বৈকালিক ভোগেও হরির লুঠের বাতাসার সাথী সেই নকুলদানাই।
এ মিষ্টি তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কেও অবগত হওয়া যাক। চিনি, জল আর সোডা মিশিয়ে তৈরি হয় শিরা। আর এই শিরার মধ্যে খই বা মটর ডুবিয়ে তুলে নিলেই তৈরি নকুলদানা। শুধুমাত্র বাংলাতে নয় দক্ষিণ ভারতেও বেশ চাহিদা রয়েছে এই মিষ্টির। সস্তার এ মিষ্টি কেষ্ট পুজোর থালা থেকে তাই জায়গা পেয়েছে আপামর বাঙালির মনেও।
Discussion about this post