বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে বংশী আর কাকিলা নদীর মোহনায় অবস্থিত ধামরাই পৌরসভা। এখানেই স্বমহিমায় শ্রী শ্রী যশোমাধব মূর্তি এবং রথটি প্রতিষ্ঠিত। বাংলার পাল বংশের শেষ রাজা যশোপাল ছিলেন প্রজামুখী ও ধার্মিক। রাজা যশোপাল এই মাধব মূর্তির প্রতিষ্ঠাতা। একবার রাজা যশোপাল হাতির পিঠে চড়ে বেড়াতে যান ঢাকার অদূরে ধামরাই এলাকার পাশের গ্রামে। রাস্তায় চলতে চলতে হাতি একটি মাটির টিবির সামনে গেলে হাতিটি থেমে যায় আর চলতে চায় না। রাজা শত চেষ্টা করেও হাতিটিকে সামনে নিতে পারলেন না। তখন তিনি হাতি থেকে নেমে স্থানীয় লোকজনকে ঐ মাটির টিবি খনন করার জন্য নির্দেশ দেন। সেখানে একটি মন্দির পাওয়া যায়। এছাড়া কতগুলো মূর্তিও সেখানে পাওয়া যায়। এর মধ্যে শ্রী বিষ্ণুর মূর্তির মতো শ্রী মাধব মূর্তিও ছিল। রাজা ভক্তি করে সেগুলো সঙ্গে নিয়ে আসেন।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2022/07/11.jpg)
পরে ধামরাই সদরে ঠাকুর বাড়ি পঞ্চাশ গ্রামের বিশিষ্ট পণ্ডিত শ্রী রামজীবন রায়কে তিনি মাধব মূর্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্বভার দেন।তখন থেকে শ্রী মাধবের নামের সঙ্গে রাজা যশোপালের নামটি বিগ্রহের নতুন নামকরণ হল শ্রী শ্রী যশোমাধব। সেইদিন থেকে রাজা অমর হয়ে রয়ে গেলেন। সেইদিন থেকে সেবা পুজোর বন্দোবস্ত হলো। আজও ধামরাইয়ে শ্রী মাধব অঙ্গণে আরাধনা চলে আসছে। পরবর্তীতে শ্রী মাধবকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে ধামরাইয়ের শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথযাত্রা ও মেলা। আজও হাজার হাজার ভক্ত হাজির হয়ে তাদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান রথযাত্রা প্রতিবছর সম্পন্ন করে থাকে।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2022/07/3-3.jpg)
ধামরাই রথ ১৬৭৩ সাল থেকে জাঁকজমক পূর্ণভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে। দেশভাগের পূর্বে ধামরাই রথ সম্প্রসারণে বেশি ভূমিকা পালন করেন ধামরাই এর পাশ্ববর্তী মানিকগঞ্জ জেলার বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী ও জমিদার রায়বাহাদুর হরেন্দ্র কুমার রায়। দেশ বিভাগের পর এই পরিবারের অধিকাংশ উত্তরসূরী কলকাতায় চলে যায়। বর্তমান যশোমাধব পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে পরিচালনা করছেন ধামরাই রথযাত্রা উৎসব। বৃহত্তর ঢাকা জেলার ধামরাই, কালিয়াকৈর, সাটুরিয়া, সিঙ্গাইর থানার বিভিন্ন কাঠশিল্পী যৌথভাবে নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করে ৬০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন রথটি তৈরি করেন। এ রথটি ত্রিতলবিশিষ্ট ছিল, যার ১ম ও ২য় তলে চার কোণে চারটি প্রকোষ্ঠ ও তৃতীয় তলে একটি প্রকোষ্ঠ ছিল।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2022/07/2-2.jpg)
রথ টানার সময় হাজার হাজার নর-নারীর উলুধ্বনির মাধ্যমে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এই শ্রী মাধবকে কেন্দ্র করেই দেশ-বিদেশের নানা স্থান থেকে লাখ লাখ পূণ্যার্থীদের সমাগম ঘটে বাংলাদেশের ঢাকা’র ধামরাইয়ের রথযাত্রায়। ছবিতে ঐতিহাসিক ধামরাই রথ ও বালিয়াটি জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী ও রায়বাহাদুর হরেন্দ্র কুমার রায়ের পরিত্যক্ত বাড়ি যা সরকারিভাবে সংরক্ষিত।
Discussion about this post