‘ভেতো বাঙালি’ হিসেবে যতই দুর্নাম থাক না কেন, বাঙালি কেবল শুধু মাছ ভাতেই সন্তুষ্ট নয়। বাঙালি আমার সর্বভুক। তাই তো বড়দিনের কেক হোক বা দুর্গা পুজোর খিচুরি ভোগ কিংবা ঈদের বিরিয়ানি। উৎসবমুখর বাঙালি মাত্রই লিপ্ত হন ‘খাই খাই’ ধর্মে। ইতিহাস সাক্ষী সেই ‘দামোদর শেঠ’ থেকে এ যুগের ‘ফুডকা’। বাঙালি চিরকালই ভোজনরসিক ছিল, আছে আর থাকবেও। তবে ‘ফুডকা’ শুধু ভোজন রসিকই নয় , খাবারের সঙ্গে তাদের একেবারে ‘টুরু লাব’। তাঁরা বিশ্বাস করে প্রতিটা খাবারের একটা গল্প আছে আর তাই তো খাবার নিয়ে গোয়েন্দাগিরিতে তারা ফেলু মিত্তিরকেও টেক্কা দিতে প্রস্তুত। এক দিকে বাতাসে ঈদের গন্ধ ম ম করছে, আর অন্য দিকে ‘ফুডকা’র সঙ্গে চব্য চোষ্য গল্পগুচ্ছের সাক্ষী ছিলাম আমরা। আসুন জেনে নেওয়া যাক ঠিক কী বলছেন টিম ‘ফুডকা’!
স্ট্রীট ফুড থেকে নামী দামী রেস্তোরাঁ, ‘ফুডকা’ ছুটে যায় কীসের টানে! নেশা নাকি পেশা?
নেশাও না পেশাও না, আমরা ছুটে যাই ভালোবাসার টানে। আমরা মনে করি খাবারের ভালো মন্দ বিচার না করে, প্রতিটা খাবারের পিছনেই যে একটা করে গল্প লুকিয়ে আছে সেটাকে সবার সামনে তুলে ধরা এবং সেটা নিজেদের মত করেই হাসি ঠাট্টা খাওয়া দাওয়ার মধ্যে দিয়েই তুলে ধরা। এই উদ্দ্যেশ্যেই মীর আফসার আলী এর হাত ধরেই ‘ফুডকা’ ওয়েব সিরিজটির পথ চলা শুরু হয়। পরে একে একে ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী ও সুনন্দ ব্যানার্জী যুক্ত হন।
ঈদের বিরিয়ানি নাকি বিরিয়ানির ঈদ?
ভোজন রসিক বাঙালি জাতির কাছে বিরিয়ানিটা প্রায় একটা ধর্মে পরিণত হয়েছে। মানুষ আনন্দেও বিরিয়ানি খাচ্ছে, মন খারাপও বিরিয়ানি খাচ্ছে, তাই সাভাবিক ভাবেই ঈদেও বিরিয়ানি খাবে সেটাই ধরে নেওয়া হয়েছে। বাঙালি ঈদ আর বিরিয়ানিকে যতটা সমর্থক মনে করে, আসলে তত টাও সমর্থক নয় সেটা। আমাদের বহু মুসলিম বন্ধু বান্ধবদের দেখেছি ঈদের নামাজের পর ফলাহার করতে, বিশেষত যেসমস্ত ফলে জলিও উপাদানের পরিমাণ বেশি রয়েছে। অথবা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে হালিম খেতে দেখেছি। আর তাছাড়া ওই নিরম্ব উপসের পর বিরিয়ানির মত মশলাদার খাবার সাস্থ্যের পক্ষেও তেমন ভালো নয় বা প্রচলিতও নয়।
এই অতিমারী আবহ তথা আংশিক লকডাউনে রেস্তোরাঁ ও স্ট্রীট ফুডের ব্যবসায়ীদের নিঃসন্দেহে ক্ষতি হচ্ছে। তাদের জন্য ‘ফুডকা’র তরফে কী সাজেশন রইল?
এই সময়টা দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করার সময়। স্ট্রীট ফুড থেকে রেস্তোরাঁ প্রতিটা ব্যবসায়ী এই সময় ক্ষতিগ্রস্থ। তাই যারা কোনোভাবে ডেলিভারি করতে পারছেন, সেটা কোনো অ্যাপ এর মাধ্যমে হোক বা নিজেরাই করুন তারা অন্তত বাঁচতে পারবেন। কিন্তু যারা একেবারেই পারছেন না তাদের বলবো কিছুদিন এই কঠিন লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি খুব তাড়াতাড়িই এই দুঃসময় কাটিয়ে আবারও আমরা সবাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবো। আপনারাও মানুষকে ভালো ভালো খাওয়াতে পারবেন এবং আমরাও ভালো ভালো খেয়ে বেড়াতে পারবো।
‘ফ্যানস অফ ফুডকা’ এই অভিনব ভাবনার জন্মলগ্নে কোন রহস্য লুকিয়ে?
‘ফুডকা’ ওয়েব সিরিজ এর ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত একতরফাই কথা বলে যাই, কিছু মানুষ কমেন্ট সেকশনে তাদের মতামত বা আবদার বা আর্জি জানালে তারপর হয় তো আমরা সেটা নিয়ে আবার কিছু একটা বলি। কিন্তু ‘ফ্যানস ওফ ফুডকা’ হলো আমাদের যারা ফলোয়ার আছেন বা যারা আমাদের ভালোবাসেন, তাদের সকলকে এক জায়গাতে নিয়ে আসার একটি ফোরাম মাত্র। ‘ফুডকা’র তরফে আমাদের আইডিয়া বা চেষ্টা ছিল যে যারা ‘ফুডকা’র অনুগামী, তাদের মধ্যে আমরাও পড়ছি, তাদের একটি ফোরামের মধ্যে নিয়ে আসা। যাতে খাদ্য সংক্রান্ত বিষয়ে গুলি নিয়ে বিভিন্ন মানুষের থেকে বিভিন্ন গল্প শুনতে পারি, নানান জায়গার খোঁজ পেতে পারি এবং আমরা একটা ফিডব্যাক পেতে পারি যে আমরা কি কি করতে পারি। বিভিন্ন মানুষের সাথে জনসংযোক স্থাপন ও মতামত আদান প্রদানের জন্যই ‘ফ্যানস ওফ ফুডকা’র জন্ম।
নস্টালজিক নাকি আধুনিক রান্না; ভোজন রসিক বাঙালি হিসেবে কোনটিকে অগ্রাধিকার দেবে ‘ফুডকা’?
ভোজন রসিক বাঙালি হিসেবে কোনোটিকেই অগ্রাধিকার দেবো না। আমাদের মতে খাবার খেতে ভালো হওয়া দরকার তা সেটা আধুনিক হোক বা নস্টালজিক। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি বেশির ভাগ আধুনিক রান্নাই কোনো না কোনো নস্টালজিক রান্নাকেই নতুন ভাবে পরিবেশন করছে। কাজেই খাবার ভালো হতে হবে, খেতে ভালো হতে হবে, আধুনিক নস্টালজিক এই ভেদাভেদে আমরা খুব একটা বিশ্বাসী নই।
সবশেষে রইল টিম ফুডকার তরফে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় বক্তব্য
আমাদের একটাই বক্তব্য। আমরা কে কী খাচ্ছি, কতখানি খাচ্ছি, তার থেকে অনেক বেশি দরকার হচ্ছে আমরা কতজন খেতে পাচ্ছি এবং তারা পেট ভরে খেতে পাচ্ছি কিনা। আমরা যদি সবাই এই ব্যাপারটা নিয়ে কাজ করি যে, যারা খেতে পারছে না তারা কেন খেতে পারছে না? তাদের মুখে সামান্য খাবার তুলে দেওয়া এবং তার সাথে সাথে খাবারের গল্পটা শেয়ার করা। ফুডকা টিমের বিশ্বাস প্রতিটা খাবারের একটা গল্প আছে আর সেই গল্পটা শোনানোর জন্যই ফুডকা টিমের জন্ম। তাই আমাদের বক্তব্য লাগাও হাত; সেটা গল্প শোনাতেই হোক, খাবার খেয়েই হোক কিংবা মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতেই হোক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমরা এমন কিছু এনজিও বা ফোরামের সাথে যুক্ত ( নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ) যাদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া বা অন্যান্য সাহায্য আমরা করে থাকি। ভবিষ্যতেও আরো বহু এনজিও বা ফোরামের সাথে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।
Discussion about this post