বাংলাদেশের বগুড়া জেলার নাম শুনলেই সকলের মনে প্রথমেই বগুড়ার দইয়ের কথা আসে। কিন্তু, বাস্তবে শুধু দই নয়, এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বগুড়ার চিকন সেমাই বা সাদা সেমাইয়ের নামও। বিশেষ করে রমজান মাসে চিকন সেমাইয়ের কদর থাকে তুঙ্গে। তাছাড়া, জেলার গণ্ডি পেরিয়ে সারা বাংলাদেশ জুড়েই সমাদৃত হচ্ছে এই সেমাই। এই সেমাই তৈরিতে অবদান রয়েছে বগুড়ার নারীদের। এই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক নারী সেমাই তৈরিকে পেশা করেছেন। সেমাইপল্লীতে ঈদকে সামনে রেখে এখন তাই পুরোদমে ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়ার নারীরা।
সেমাইয়ের মূল উৎপত্তি সম্ভবত পাকিস্তানে। দেশভাগ এবং দেশ স্বাধীনের আগে বিহারীদের হাত ধরে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে সেমাই খাওয়ার প্রচলন হয়। বগুড়ার অধিকাংশ কারিগররা সেই বিহারীদের কাছ থেকেই সেমাই তৈরির নিয়ম ও কৌশল শিখেছেন। পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশের সৈয়দপুরে প্রচুর পরিমাণে সেমাই তৈরি হত। আবার সেখানকার কারিগরদের হাতে শিখেছিলেন বগুড়ার কারিগরেরা। ফলে চালু হয়েছে বগুড়ায় সেমায় তৈরি। এরপর পরবর্তীকালে বগুড়াই হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সেমাই তৈরি এবং বিক্রির ঘাঁটি। বর্তমানে এই সেমাই তৈরির সঙ্গে অধিকাংশ জায়গায় যুক্ত হয়েছেন সাধারণ পরিবারের নারীরা।
বগুড়ায় তিন ধরণের সেমাই তৈরি হয়। সয়াবিন, ডালডা এবং ঘিয়ে ভাজা। প্রতিবছর রমজান মাসে এই অঞ্চলে অন্তত ১৫০টি কারখানায় সেমাই উৎপাদন হয়। এরমধ্যে ব্র্যান্ডের কারখানা ৮ থেকে ১০টি। বাকিগুলি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান, এবং মৌসুমী। এসব সেমাই উত্তরাঞ্চলসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল এবং সিলেটের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য যায়। বগুড়ায় প্রায় ২০ থেকে ৩০ টি বাড়িতে নারীরা নিজেরাই সেমাই প্রস্তুত করেন। জল ও ময়দার মিশ্রণ, রোদে শুকোনো, প্যাকেটজাত করা এই সব কাজই তাঁরা করে থাকেন। কেউ কেউ অনলাইনে সেমাই বিক্রিও করছেন নিজেদের উদ্যোগে।
Discussion about this post