বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী পাবনা জেলা। এই জেলার সাথে জড়িয়ে আছে কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের বহু কাহিনী। পাবনা জেলাতেই অবস্থিত সুচিত্রা সেনের বসতভিটা। এই জেলার অন্যতম একটি আকর্ষণ রসে ভরা রসমালাই। পাবনা ও পাবনার চাটমোহরের বিখ্যাত অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসমালাইয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে আছে চারিদিকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের শান্তিনিকেতন থেকে আমেরিকার সিলিকন ভ্যালী পর্যন্ত সুখ্যাতি রয়েছে এখানকার রসমালাইয়ের।
অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের পথ চলা শুরু ব্রিটিশ শাসনকাল থেকে। সেই সময় চাটমোহর ছিল এক হিন্দু বর্ধিষ্ণু জনপদ। চাটাইয়ের ওপর মোহর ঢেলে চলত বেঁচাকেনা। পাবনার শহরের কৃষ্ণদাস কুন্ডুর গদিঘরের সামনে ছিল একটি টিনের চালের ছোট্ট মিষ্টির দোকান। মালিক ছিলেন সুদর্শন চেহারার মনো পাল। মনো পালের হাত ধরেই প্রথম চাটমোহরে রসমালাই নামের মিষ্টি বানানো শুরু হয়। তারপর কেটে গেছে বহু দশক। বর্তমানে দাদু মনো পালের সেই মিষ্টির দোকানের মালিক কমল পাল। দাদুর মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে তিনি এই দোকানের দায়িত্ব পেয়েছেন। বর্তমানে দোকানটি অবস্থিত বাংলাদেশের পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার দোলবেদীতলা এলাকায়। কমল পালের মতে, দিনে ১৪০ থেকে ২০০ কেজির রসমালাই বিক্রি হয়। এছাড়াও বেশ কিছু স্পেশাল অর্ডার থাকে।
কমল পাল জানান, “১৯৬৬ সালে দাদু এই রসমালাই ৪ টাকা সের বিক্রি করতেন। সেই সময় দুধের দাম ছিল ৩ আনা, ৪ আনা সের। আমি যখন দাদুর মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে যখন শুরু মিষ্টির ব্যবসা শুরু করি, তখন ১৬ টাকা সের রসমালই বিক্রি হতো। দুধ ছিল ৩-৪ টাকা সের। আর এখন সেই রসমালাই বিক্রি হয় ৩০০ টাকা কেজি। এখন দুধ ৫০ টাকা লিটার। দাম বৃদ্ধির এই কারণ রসমালাইয়ের গুণগত মান বজায় রাখা। ফলে দাম বেশি হওয়াতেও বিক্রি কমেনি।”
পাবনার চাটমোহরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি রসমালাইয়ের টানে দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন এই দোকানে। এই অপরূপ মিষ্টি চোখে দেখলে শুধু মিষ্টিপ্রেমীই নয়, সাধারণ যে কারোর জিভে জল না এসে পারে না। স্থানীয় ক্রেতাদের মতে, “সময় বদলেছে, বদলায়নি রসমালাইয়ের স্বাদ। আমাদের দাদুরাও এই দোকানের নিয়মিত ক্রেতা ছিলেন। এখন আমরা হয়েছি। বাড়িতে আত্মীয়রা এলে তাদের প্রথম পছন্দের খাবার অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসমালাই।”
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – মহম্মদ সাইফুল ইসলাম
Discussion about this post