খাদ্যরসিক বাঙালি যেখানেই ঘুরতে যাক দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি সেখানকার বিখ্যাত খাবারটির খোঁজ রাখতেও কিন্তু ভোলেন না। আর সে খাবার যদি হয় মিষ্টি তাহলে তো সোনায় সোহাগা। বাঙালির মিষ্টি অন্ত প্রাণ তাই যে কোনও শুভঅনুষ্ঠান মিষ্টি ছাড়া শেষ হবে সেটি কিন্তু এক্কেবারে হবার নয়। কি তাই তো? এছাড়া বেশ কিছু অঞ্চলের বিখ্যাত মিষ্টির স্বাদ পেতে অনেক জায়গা ঘুরতেও রাজি বাঙালি পর্যটকরা। ঠিক তেমনই মিষ্টিপ্রিয়দের কাছে বাঁকুড়া জেলাটা মিষ্টির স্বর্গ বৈ কম কিছু নয়। বিভিন্ন অঞ্চলের বিখ্যাত সব মিষ্টির স্বাদে মশগুল সব পর্যটকরা।
শুশুনিয়া পাহাড়ে ঘুরতে যাবার সময় ছাতনা নামক একটি গ্রাম পড়ে। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন! মধ্যযুগের কবি চণ্ডীদাসের জন্মস্থান হল এই ছাতনা গ্রাম। তাই পাহাড়ে ঘুরতে এলে এই গ্রামের বিখ্যাত জিভে জল আনা ‘প্যাড়া’ র স্বাদ নিতে একদমই ভোলেন না পর্যটকরা। মালদা মানেই যেমন কানসাট, শান্তিপুর মানেই নিখুঁতি আর জনাই মানেই যেমন মনোহরা তেমনই ছাতনা মানেই যে প্যাড়া তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মিষ্টিপ্রিয় বাঙালি তাই প্যাড়ার টানে খুঁজে খুঁজে ঠিক পৌঁছে যান বাঁকুড়ার অন্যতম এই ছাতনা গ্রামে।শুধুমাত্র বাঁকুড়াতেই নয়, এই মিষ্টি নজর কেড়েছে সারা বাংলাতেই। এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও একসময় রাজ করেছে সুস্বাদু এই মিষ্টি। মূলত চাঁছি আর গাওয়া ঘি দিয়ে তৈরি হয় এই সন্দেশ ৷ সঙ্গে ক্ষীরও মেশানো হয়। ছাতনার মোটামুটি প্রতিটা দোকানেই ঢালাও বিক্রি রয়েছে এই মিষ্টির। দামও পকেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই- কোনওটি দশ টাকা পিস তো কোনওটি পাঁচ টাকা, কোনওটি আবার কুড়ি টাকাও।
স্বাদে খাসা এই প্যাড়ার আদি শ্রষ্টা কে সে বিষয় নিয়ে স্পষ্ট তেমন কোনো ধারণা কারও নেই ৷ তবে এই সন্দেশ প্রস্তুতকারকদের মতে, স্বাধীনতার আগে থেকেই মিষ্টিমহলে বেশ পরিচিত ছাতনার প্যাড়া। তাই নয় নয় করে এই মিষ্টিরও বয়স হল বেশ অনেকদিনই। তবে এই সন্দেশ প্রস্তুতকারকদের আদি বাসস্থান বাঁকুড়ার ছাতনা হলেও বর্তমানে তাঁরা জেলা এবং রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তেই রয়েছেন। তাই প্যাড়ার খ্যাতিও শুধুমাত্র বাঁকুড়ার মধ্যেই সীমিত নেই আর।
ইতিহাস যাইহোক, স্বাদে এবং অভিনবত্বে বাংলায় এই বিশেষ সন্দেশের জুড়ি মেলা ভার। তাই বাঁকুড়ার ছাতনার এই সন্দেশের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রস্তুতকারকদের দাবি, আধুনিক যুগের ঘেরাটোপে যেভাবে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলার প্রসিদ্ধ রসগোল্লা বা বর্ধমানের মিহিদানা, ঠিক সেইভাবেই জিআই স্বীকৃতি পাক বাঁকুড়ার ছাতনার এই প্যাঁড়া। তাতে আন্তর্জাতিক মহলের মিষ্টিপ্রিয়দের কাছেও ছাতনার গর্ব অর্থাৎ এই মিষ্টির চাহিদা বাড়বে আরও অনেকখানি।
Discussion about this post