ছেলেবেলায় কম বেশি সকলকেই মুখস্ত করতে হয়েছে নীল নদের গতিপথ। আর একাজ করতে গিয়ে কাল ঘাম ছুটেছে অনেকেরই। তবে এ গতিপথ পরিবর্তন করে শুধু নীল নদ নয় গোটা এক ফালি মিশর এসে হাজির হয়েছে কলকাতার বুকে। এ উদ্যোগের মূল উদ্যোক্তা হলেন রৌণক দত্ত। তিনি একজন মিশরপ্রেমী বাঙালি। দক্ষিণ কলকাতার কসবায় রৌণকবাবুর দোকান। বোসপুকুর তালবাগান এলাকায় এমন একটি দোকান নজর কাড়ে বৈকি! গোটা দোকান জুড়ে মিশরের দৈনন্দিন জিনিস ভরতি। দোকানের নাম ‘আই অফ হোরাস’। হোরাস আসলে মিশরের শক্তি ও সুরক্ষার প্রতীক। সেই কথা মাথায় রেখেই তার দোকানের এই নামকরণ। রৌণক দত্ত পেশায় ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। তবে সে কাজে তার মন না টেকায় এরূপ সিদ্ধান্ত।
রৌণক বাবুর মতে, ছোটবেলায় ইতিহাস পড়ার সময় থেকেই মিশরের প্রতি তার অদ্ভুত টান। তারপর তার স্কুলজীবনে মিশর যাওয়া। আর ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে তার এই দোকান শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সময়ে কোনো বাঁধা তার জীবনে আসেনি। বরং তার পরিবারের সকলেই অভিনন্দন জানিয়েছে রৌণক বাবুকে। জীবনে মিশর নিয়ে কাজ করার প্রবল ইচ্ছের ফসল বর্তমানের এই দোকান। মাত্র ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকার জিনিস পর্যন্ত মেলে তার দোকানে।
তবে এই দোকান মোটেই অ্যান্টিকের দোকান নয়। রৌণক বাবুর ভাষায় অ্যান্টিক সরকারি সম্পত্তি, তা বিক্রি করা তার কাজ নয়। মিশরীয় সুতির জামা থেকে শুরু করে উটের চামড়ার বেল্ট, মিশরীয় ভেড়ার চামড়ার জ্যাকেট, মিশরীয় আসবাবপত্র, বিভিন্ন মূর্তি, ল্যাপিস লাজুলি পাথরের কিছু জিনিস, বাদ নেই কিছুই। সেই সঙ্গে আছে কিছু টার্কিশ ল্যাম্পশেডও। গোটা দোকান সাজানো বিভিন্ন মিশরীয় জিনিস দিয়ে। কিছু বিখ্যাত মূর্তির রেপ্লিকা রয়েছে তার দোকানে। বিশেষ দ্রষ্টব্য হিসেবে রয়েছে প্যাপিরাসের পেইন্টিং। তার দোকানের জিনিস যায় বিদেশেও।
এ দোকানের আরও এক বিশেষত্ব হলো বই। দোকানে ঢুকলেই আপনি এক কোণায় দেখতে পাবেন থরে থরে সাজানো রয়েছে বই। তার মধ্যে এমন কিছু বই রয়েছে, যা এখন আর ছাপা হয় না। পাঠক পাঠিকারা সেখানে বসে পড়তে পারেন। তবে বই নিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই। দোকানটি একেবারেই বড় রাস্তার ওপরে। এইচডিএফসি ব্যাংকের বিপরীতে। বেলা ১২টা থেকে রাত ৯টা অবধি খোলা থাকে এই দোকান। রবিবার বন্ধ। এক টুকরো ইতিহাস ঘেঁটে দেখতে হলে যেতেই পারেন ‘আই অফ হোরাসে’।
Discussion about this post