কলেজ স্ট্রিট, যাকে বলা যায় তিলোত্তমার একেবারে প্রাণকেন্দ্র। রোজ রোজ কতশত মানুষের যে সমাগম এই চত্বরে তা চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। বইপ্রেমী তো আছেই, এছাড়াও কলেজ পড়ুয়া, খাদ্যরসিক– সব ধরনের মানুষ মিলিয়েই ভিড় জমে যায় মুহূর্তেই। তাই কলেজ স্ট্রিট বাদ দিয়ে কলকাতাকে ভাবা ‘নৈব নৈব চ’। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় বই ঘাটতে গিয়ে বিভোর হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনই ফেরার পথে একটু পেট পুজো না হলেও ঠিক চলে না। খাবারের শতাব্দী প্রাচীন আস্ত খনিগুলো আজও তাদের ধারাবাহিকতা বয়ে নিয়ে চলেছে এই চত্বরের বুকে দাঁড়িয়েই। তেমনই মুখরোচক স্বাদে মানুষের দিল খুশ করে দিতে জুড়ি মেলা ভার দিলখুসা কেবিনের।
প্রায় ১০৮ বছরের পুরনো এই প্রতিষ্ঠান। প্রধানত কবিরাজি পদটির জন্যই বিশ্বজোড়া খ্যাতি পুরনো কলকাতার এই কেবিনটির। ফিশ কবিরাজি বা মটন– সবই জনপ্রিয়তার শিখরে। এছাড়াও চপ, কাটলেট, মটন কষা মেনুতে রেখেই শুরু হয়েছিল দিলখুসা কেবিনের যাত্রা। তবে সময় পাল্টেছে, সাথে পাল্টেছে মানুষের স্বাদ। বর্তমান প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে তাই বিরিয়ানি এবং কিছু চাইনিজ পদও যোগ হয়েছে মেনুতে। ঢুকেই ডানদিকে দেওয়ালে সাইনবোর্ডের মত টাঙানো মেনু কার্ড। সময়ের সাথে সাথে প্রতিটা পদেরই দাম কিছুটা বেড়েছে ঠিকই, তবে স্বাদ আজও আটকে আছে ১০৮ বছর আগেকার সেই কেবিনের স্বাদেই।
দিলখুসা কেবিন ভোজনরসিকদের কাছে বলা যায় স্বর্গরাজ্য। এমনকি বেশ কিছু স্বনামধন্য কিংবদন্তি যেমন কাজী নজরুল ইসলাম, গণেশ পাইন প্রমুখদের পায়ের ধুলো পড়েছে এখানে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে অর্থাৎ ব্রিটিশ যুগে প্রতিষ্ঠিত কেবিনটি আরও কত কিছুর যে সাক্ষী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ৮৮ মহাত্মা গান্ধী রোড, কলকাতা-৯, কলেজ স্ট্রীট মোড়েই খুঁজে পাবেন এই কিংবদন্তি কেবিনটিকে। তাই এবার পুজোয় না হয় উত্তরে ঠাকুর দেখতে গেলে দিলখুসা কেবিনের কবিরাজির স্বাদের সাথেও পরিচয় করা যাক!
চিত্র ঋণ – Vintage Kolkata Facebook Page
Discussion about this post