কুমোরটুলি মানেই প্রতিমা তৈরি এবং তার বেচা-কেনা। কিন্তু ব্যতিক্রম রয়েছে কালী প্রতিমার ক্ষেত্রে। পটুয়াপাড়ার ছাউনি থেকে পুজো মন্ডপে আসা পর্যন্ত প্রতিমার বেশ খানিকটা বদল ঘটে। আমরা মায়ের বাঁ হাতে রক্তবীজের মুন্ড, এলো চুল, হাতের খাঁড়া, মাথার মুকুট, মুকুটের পালক, গলায় রক্ত জবার মালা ইত্যাদি দেখতে পাই। মৃৎশিল্পীরা মূর্তি নির্মাণের সময় মা কালীর গলার মুন্ডমালাটি ছাঁচে ফেলে তৈরী করেন যা প্রথম থেকেই মূর্তিসংলগ্ন থাকে। পটুয়াপাড়া থেকে পুজোমন্ডপে প্রতিমা আনার পর কুমোরটুলি থেকে লোক এসে মা কালীকে নিখুঁতভাবে সাজায়। একেই এক কথায় বলা হয় কালীর সাজ। তাই এই সময়েই কুমোরটুলিতে মূর্তির বিক্রির সঙ্গেই তুঙ্গে ওঠে কালীর সাজের বাজারও।
এ বছর পটুয়াপাড়ায় লোকজনের ভিড় অত্যন্ত কম। ছোট ছোট দোকানগুলোতে ভিড় তুলনামূলক বেশি, বড় দোকানগুলোর তুলনায়। মানুষ দাম-দর করছে কিন্তু জিনিসপত্র তেমনভাবে কিনছে না। সাধারণতঃ স্বল্পমূল্যের চাঁদমালা, শোলার কাজ, ঠাকুরের অস্ত্র, কালীর হাতে থাকা মুন্ড ইত্যাদির বিক্রি বেশ ভালো। জরির কাজের গলার মালার দাম বেশি তাই, লোকজন প্লাস্টিকের মালা কিনতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। ডাকের সাজের মুকুটের তুলনায়, জরির সাজের মুকুটের দাম তুলনামূলক কম।
তবে মূলতঃ মহামারী পরিস্থিতিতে কিছু শিল্পীর অসুস্থতার কারণে এবং কাঁচামালের দাম বাড়ার ফলে সাজের সামগ্রীর দামও আকাশছোঁয়া। কুমোরটুলিতে প্রতি বছর যে হারে ভিড় হয় এ বছর পুলিশি তদারকিতে ভিড়ের পরিমাণ অনেকটাই কম। কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বারোয়ারী পুজোর কেনাকাটা অল্পমাত্রায় চললেও ভিনরাজ্যের তথা ভিনদেশের পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ। কালীর সাজ নিয়ে মানুষের মনের আগ্রহ হয়ত আগের মতই রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে এই মুহূর্তে তা কিছুটা স্তিমিত। তবুও আশা করা যায়, আগামী বছর মায়ের কুমোরটুলির এই সমান্তরাল ব্যবসা আবার তার আগের রূপ ফিরে পাবে।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – চাঁদ কুমার ঘোষ, তীর্থ নারায়ণ ভট্টাচার্য্য
Discussion about this post