বর্ষবরণের পালা শেষ। এবার অপেক্ষা পৌষ-পার্বণের। কেক হোক বা পিঠে-পুলি খাদ্যরসিক বাঙালি সবেতেই প্রস্তুত। তবে পিঠে পুলির দোসর হচ্ছে গুড়। তাকে ছাড়া কি উৎসবের আমেজ বজায় থাকে! খেজুর গুড় হোক বা নলেন গুড় শীতে এর চাহিদা থাকে তুঙ্গে। গুড় ব্যবসায়ীদের বাজার ভালো যাবার এই হলো আদর্শ সময়। পৌষের বাতাস যেন বয়ে আনে ঘরে ঘরে পিঠে-পুলির আগমন বার্তা।
এবারে গুড় ব্যবসায় দক্ষিণবঙ্গের সাথে পাল্লা দিয়েছে উত্তরবঙ্গ। মালদার খেজুর গুড় ব্যবসায়ীরা এবার জোর কদমে লেগে পড়েছেন ব্যবসার জন্য। মালদা জেলার বামনগোলা, হবিবপুর ব্লকের এলাকায় রয়েছে বিপুল পরিমাণে খেজুর গাছ। কিন্তু এ ব্যবসা মূলত যাত্রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্গাপুর গ্রামের। গোটা জেলার মধ্যে এই গ্রামেই খাঁটি গুড় পাওয়া যায় বলে জানা গিয়েছে। এ এলাকার খেজুর গাছের রস খুব মিষ্টি বলে প্রস্তুতকারীদের দাবি। সে কারণেই এলাকার খেজুর রস এত খাঁটি। তবে সরকারি সাহায্য না থাকায় ব্যবসা বাড়ছে না বলেই দাবি গুড় ব্যবসায়ীদের।
ইতিমধ্যে দুর্গাপুর গ্রামের ১৮টি পরিবার এই ব্যবসায় সামিল হয়েছে। তাদের সাধারণ জীবন যাপন চলে কৃষিকাজ অর্থাৎ চাষ করে। তবে শীতের মরসুম এলেই শুরু হয়ে যায় গুড়ের প্রস্তুতি। এ কাজ চলে অগ্রহায়ন থেকে ফাল্গুনের শেষ পর্যন্ত। প্রথমে চলে গাছ থেকে রস সংগ্রহ। এরপর সেই রস থেকে গুড় তৈরি শুরু হয়। নাওয়া খাওয়া ভুলে লেগে পড়তে হয় কাজে। কারণ বছরের এই সময়টুকুতেই তুলনামূলক বেশি রোজগার করা সম্ভব। এখনও পর্যন্ত খেজুর গুড় উৎপাদনে এগিয়ে রয়েছে পুরনো মালদা ব্লক।
বলাই বাহুল্য, এখানকার খেজুর গুড়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। ব্যবসা বড় হবার প্রশস্ত জায়গা পড়ে রয়েছে এখনও। পাইকারি ব্যবসা খুব খারাপ চলে এমনটা নয়। বাড়ির পুরুষদের পাশাপাশি এ কাজে সামিল হয়েছেন মহিলারাও। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী গাছ লিজে নিয়ে তাতে হাঁড়ি বাঁধেন। এক কেজি গুড় তৈরি করতে প্রায় ৮ থেকে ৯ কেজি খেজুর রস প্রয়োজন হয়। বাজার মূল্য আগে ছিল কেজি প্রতি ২৫০ টাকা। তবে এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৩৫০ টাকা কেজি। গুণগত মান যত বৃদ্ধি পাবে তার বাজার মূল্য বাড়াটাও স্বাভাবিক। মালদার খাঁটি গুড়ের সাথে এ বছর হতেই পারে পিঠের স্বাদগ্রহণ।
Discussion about this post