শীতকাল এলেই মন যেন খেজুর গুড়ের গন্ধে ভরে ওঠে। ঝোলা গুড় হোক কিংবা পাটালি গুড়—এর স্বাদে মজতে বাধ্য সকলেই। রসগোল্লা, সন্দেশ, পিঠে, পায়েস—যে কোনো খাবারে খেজুর গুড়ের ছোঁয়া মানেই যেন এক অনবদ্য অনুভূতি। শীতের নস্টালজিয়া! খেজুর গুড় পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই বিরল।
আজকাল বড় বড় শপিং মল থেকে শুরু করে ই-কমার্স ওয়েবসাইট, পাড়ার ছোট্ট দোকান থেকে বাজারের ফুটপাথ—সব জায়গাতেই খেজুর গুড়ের দেখা মেলে। কিন্তু, সেসব কতটা খাঁটি, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায় নিঃসন্দেহে। খাঁটি গুড়ের স্বাদ পেতে হলে বেরিয়ে আসতে হয় শহরের কংক্রিটের জগৎ থেকে। যেতে হয় প্রকৃতির সান্নিধ্যে, সবুজের কাছে। খেজুর গাছ সাধারণত রুক্ষ ও কাঁকুড়ে মাটিতে জন্মায়। তাই বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলার মতো জায়গাগুলোতে এই গাছের আধিক্য চোখে পড়ে।
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই মাসগুলির মধ্যেই মূলত খেজুর গুড় মেলে। দক্ষ কারিগররা শীতের এই কয়েক মাস, তাঁর এলাকার খেজুর গাছগুলির “ডাক” নিয়ে নেন। গাছের কাছেই তাঁরা তৈরি করেন অস্থায়ী বাসস্থান। খেজুর পাতায় ঢাকা ছোট্ট বাড়ি। এই বাড়িতেই তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড়। কাঁটাওয়ালা খেজুর গাছের উপরে উঠে, কারিগর নিপুণ হাতে বেঁধে দেন হাঁড়ি, তাতে জমা হয় খেজুরের রস। সেই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় গুড়।
বীরভূমের সিউড়ি ও বোলপুর থেকে প্রায় ৪০-৪৫ কিলোমিটার দূরে, ঝাড়খণ্ডের সীমানা ঘেঁষা কদমডাঙা নামের ছোট্ট গ্রামটিতে তৈরি হয় উৎকৃষ্ট গুড়। গ্রামটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন অনবদ্য, তেমনি অনবদ্য এখানকার পাটালি বা ঝোলা গুড়। এছাড়া লাভপুর, নলহাটিতেও গুড়ের উৎপাদন চলে। বর্ধমানের কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, বাঁকুড়ার তালড্যাংড়া, বিষ্ণুপুর, পুরুলিয়ার ঝালদাও কিছু কম যায়না।
Discussion about this post