শহরে পারদ ছুঁয়েছে বারোর ঘর। সকাল-বিকেল কুয়াশার চাদর, মেঘহীন আকাশ ও শিরশিরে বাতাস আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে শীতের আগমনের। শীতের লহর ছুঁয়েছে যেমন পাহাড় থেকে সাগর সৈকত সহ বাংলার গ্রাম ও মফস্বল। শীতের মরশুম মানেই পিকনিকের তোড়জোড় ও সবার প্ৰিয় উৎসব বড়দিনের সাগ্রহে অপেক্ষা। বড়দিন বা ক্রিসমাস তাই একমাত্র খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উপাসনার দিন না হয়ে বাংলার সর্বসাধারণের ‘বারো মাসের তেরো পার্বণে’ অন্তর্ভুক্ত।
উৎসবের সঙ্গে সমাজ সংস্কৃতির অভিন্ন অংশ হিসেবে খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলার আহ্লাদি শীতে বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষ্যে তাই কেক-পেস্ট্রি-কুকিজের মিষ্টি আয়োজন এক প্রকার ‘কালচার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। মফস্বল ও শহরের বুকে শীতের মরসুমে কেকের পাহাড় প্রমাণ দাবি মেটানোর জন্য তাই অসংখ্য বেকারি রাত দিন উজাড় করে তৈরী করছে কেক। নামি দামি কনফেকশনারীর সমান্তরালে আঞ্চলিক বেকারিগুলি আম জনতার কথা ভেবে সাধ্যের মধ্যে সাধপূরণে সচেষ্ট হয়েছে অতীতের মতোই। দক্ষিণ-পশ্চিম শহরতলী বেহালার এমনই এক প্রতিষ্ঠানের নাম হলো ‘বিমলা বেকারি’ – যা ১৯৬০ থেকে আজও নিরলস ভাবে অঞ্চলবাসীকে উপহার দিয়ে এসেছে মরসুমী কেক।
বেহালা চৌরাস্তা থেকে দু’মিনিট হাঁটলেই পুলিশ ফাঁড়ির পাশেই বিমলা বেকারি। প্রশস্ত জায়গা জুড়ে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে রোজকার পাউরুটির সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলছে সুস্বাদু ক্রিসমাস স্পেশাল ফ্রুট কেকের বেকিং। স্থানীয় দোকানগুলিতে সরবরাহের সঙ্গে রয়েছে কাউন্টার থেকে খুচরো ও পাইকারি দরে পাউরুটি, বিস্কুট ও কেক বিক্রির ব্যবস্থাও। বিমলা বেকারির কর্ণধার শত্রুঘ্ন সাহার দেওয়া তথ্য অনুসারে শীতের মরশুমে কেকের দাবি থাকে চড়া। কেকের গুণগত মান বজায় রাখার সঙ্গে সাধারণ মানুষের পকেটের চিন্তাও মাথায় রাখতে হয় তাদের। তাই হাফ পাউন্ড থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ তিন পাউন্ডের কেক তারা চলতি মরশুমে তৈরী করেন, তবে এক এবং দুই পাউন্ডের কেকের বিক্রিটাই বেশি হয়।
কাজু, কিসমিস সহ ময়দা, চিনি ও মাখনের দাম বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও বিমলা বেকারি অত্যন্ত সুলভ মূল্যে ‘রেগুলার’ ও ‘স্পেশ্যাল’ শ্রেণীর কেক রসিক মহলের জন্য উপলব্ধ করেছে। এক পাউন্ড রেগুলার ফ্রুট কেকের মূল্য ৮০ টাকা ও স্পেশ্যাল কেকের দাম ১৫০ টাকা। দুই পাউন্ড স্পেশ্যাল ফ্রুট কেকের মূল্য করা হয়েছে ২৮০ টাকা। বিমলা বেকারিতে রয়েছে ‘কাস্টোমাইজ কেকের’ চমৎকার ব্যবস্থাও। বহু ক্রেতারা তাদের পছন্দসই কেকের ইচ্ছে নিয়ে হাজির হলেই অভিজ্ঞ বেকারি কর্মী ধরিয়ে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় উপকরণের তালিকা। সেগুলি এনে দিলেই বেকারি কর্মীরা ক্রেতাদের সামনে বেক করে দিচ্ছেন তাদের অভিষ্ট কেক। বেকারির এমন অভিনব পরিষেবার দৌলতে বেকারি প্রাঙ্গণে কেকপ্ৰিয় জনতার হাসিমুখের ভিড় দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিতে বাধ্য। স্থানীয় দোকানিদেরও একটা বিরাট অংশ ষাট বছর পার করা বিমলা বেকারির উৎকৃষ্ট মানের বেকারিজাত পণ্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাদের স্বীকার করতে বাধা নেই যে বিমলা বেকারি দক্ষিণ-পশ্চিম শহরতলির আঞ্চলিক কেক শিল্পের বেতাজ বাদশাহ।
Discussion about this post