“আমি চাই সাঁওতাল তার ভাষায় বলবে রাষ্ট্রপুঞ্জে”, এই গান গাওয়ার প্রায় পরে পরেই সাঁওতাল ভাষা ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তপশিলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। দিনটি ছিল ২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর। এই অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বের ইতিহাসে সাঁওতালি জাতিকে তাদের মাতৃভাষা সম্পর্কে লিখিতভাবে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বহু প্রতিবন্ধকতা, বহু মানুষের প্রচেষ্টা, বহু মানুষের শুভচিন্তা এবং ভারতীয় আদিবাসী সমাজের লড়াইয়ের পরে এই সাফল্য লাভ হয়েছিল। তাই ২২ ডিসেম্বর দিনটি ভারতীয় আদিবাসী সমাজের কাছে তো বটেই, সমগ্র ভারতবাসীর কাছেই ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় দিন।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2023/12/387542445_853795562697792_4848158344025542_n-1024x1024.jpg)
সাঁওতালি ভাষা হল অস্ট্রো-এশীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্গত মুন্ডা উপপরিবারের একটি ভাষা। এই ভাষার লিপির নাম অলচিকি। ‘অল’ মানে লেখা আর ‘চিকি’র অর্থ অক্ষর বা লিপি। এই ভাষার মানুষের সংখ্যা ভারতে প্রায় ৬৫ লক্ষ, বাংলাদেশে ২ লক্ষ এবং নেপালে ৫০ হাজার। তবে বেশির ভাগ সাঁওতালি ভাষাভাষীর মানুষ বাস করেন ভারতের ঝাড়খণ্ড, আসাম, বিহার, ওড়িশা, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গে।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2023/12/1--1024x768.jpg)
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সাঁওতালি ভাষা ছিল শুধুই একটি মৌখিক ভাষা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ভাবের আদানপ্রদান হত মুখে মুখে। ১৮৬০ সালের আগে বেশ কিছু ইউরোপীয় নৃতত্ববিদ, লোককাহিনীকার এবং ধর্মপ্রচারকরা এই ভাষা লেখার জন্য বাংলা এবং লাতিন লিপি ব্যবহার করতেন। সেই সময়েই প্রথম সাঁওতালি অভিধান এবং লোককাহিনীর বই তৈরি হয়েছিল, কিন্তু তা সাধারণের জন্য প্রচলিত ছিল না। ১৯২৫ সালে ময়ূরভঞ্জ জেলার কবি পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু অলচিকি লিপির সৃষ্টি করেন এবং মানুষের মধ্যে প্রচলিত করেন। এই লিপিটিই পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং ঝাড়খন্ডে সার্বজনীনভাবে গৃহীত। তবে বাংলাদেশে এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ভাষা বাংলা লিপিতেই লেখা হয়।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2023/12/2--1024x682.jpg)
২২ ডিসেম্বর দিনটি সাঁওতালি ভাষা বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয় সারা দেশ জুড়ে। বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন, গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটিকে স্মরণ করা হয়। ২০০৩ সালে সাঁওতালি ভাষা সরকারি স্বীকৃতি লাভ করার পর দিল্লীতে সাহিত্য একাডেমী থেকে প্রতি বছর সাঁওতালি লেখকদের পুরস্কৃত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গেও গঠিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি একাডেমী। তৈরি হয়েছে সাঁওতালি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শুরু হয়েছে অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠন। তবে, পরিকাঠামোগত বিশৃঙ্খলা রয়েই গেছে। আর সেই বিশৃঙ্খলা দূর করার দাবিতে অনড় আরও অনেক মানুষ। লড়াইয়ের পথ হয়েছে আরও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর।
Discussion about this post