সুস্বাদু খাবারের তালিকায় যেসব পদ আসে, কেক তার মধ্যে অন্যতম। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী যেকোনো রকমের আনন্দ অনুষ্ঠানে কেকের উপস্থিতিটাই এক অন্য মাত্রা আনে। রান্নার বই থেকে ইউটিউব, লোভনীয় কেক প্রস্তুতির রেসিপি তো আজ খুবই সহজলভ্য। কিন্তু যখন প্রথম বাংলায় কেকের জন্ম হলো, তখন কেমন ছিল বাঙালির রুচি? বাংলায় কেকের জন্ম ইতিহাসে কার অবদান সর্বাধিক, চলুন দেখি একবার।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/12/2-min-5.jpg)
১৯৩০ সাল। ছিন্নমূল মনোতোষ চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় প্রথম পা রাখলেন। নামমাত্র বেতনে শিক্ষানবিশ হয়ে যোগ দিলেন এক প্রতিষ্ঠানে। তৎকালীন সম্ভ্রান্ত প্রতিষ্ঠান ছিল সেটি ‘ফারপো’। যেখানে তিনি অল্পদিনেই আয়ত্ত করে ফেললেন, কেক প্রস্তুতির খুঁটিনাটি। মনে ছিল আত্মবিশ্বাস, চোখে ছিল হাজার স্বপ্ন আর ছিল পরিবারের গুরুভার। চাকরি ছেড়ে নেমে পড়লেন এক চরম ঝুঁকিপূর্ণ পথে। নিজেই শুরু করলেন বেকিং এর ব্যবসা। জন্ম হল ‘বড়ুয়া বেকারি’। মনোতষ ছিলেন খুবই পরিশ্রমী এক ব্যক্তিত্ব। তাই উচ্চতার শিখরে পৌঁছতেও বেশি সময় নেননি। কলকাতার মুখে লেগে গেল বড়ুয়া বেকারির কেক পেট্রিসের লোভনীয় স্বাদ। ফ্রুট কেক প্লাম কেক বলতে যেকোনো বনেদি বাড়িতেও একটাই নাম উঠত, বড়ুয়া বেকারি। বিশেষত্ব হিসেবে যে বড়ুয়া কেক পাওয়া যেত, তা ছিল সুবীর বড়ুয়া ও মনোরঞ্জন বড়ুয়ার তৈরী। কিন্তু ধীরে ধীরে পারিবারিক গোলযোগ, ভাই-ভাই মতের অমিল, এসব বাধা হয়ে দাঁড়ালো ব্যবসায়। বড়ুয়া বেকারির চারটি শাখাও তৈরী হল কলকাতায়। তার উপর নোটবন্দী, জি. এস.টির চাপে ব্যবসা সেভাবে এগোতে পারেনি বলে জানান সুবীর বাবু ও মনোরঞ্জন বাবু। পরবর্তী প্রজন্মে পূর্বেকার সেই উৎসাহটাই নেই। কোনোরকম ঘুপচিতে আজও শ্বাস ফেলছে বড়ুয়া বেকারি। কিন্তু বাঙালির আবেগের দাম দিতে আজও স্বল্প মূল্যেই পাওয়া যায় পুরোনো সেই কেকের স্বাদ। ২৩০ টাকার বেশি দামের কেক থাকেই না।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/12/80047375_10215632971438161_9147070310753763328_n-min.jpg)
মধ্য কলকাতায় দীর্ঘ ৯০ বছর ধরে মধ্যবিত্তের মুখে হাসি ফুটিয়ে এসেছে বড়ুয়া বেকারী। সাধারণত ব্রেড বিক্রেতা হিসেবেই সারা বছর পসার জমিয়ে থাকে এই সংস্থা। তবে জিসেম্বর আসতেই শুরু হয়ে যায় কেকে তৈরির প্রস্তুতি। কেবলমাত্র ২০ দিনই মেলে এই কেকের দেখা। তৈরি শুরু হয় ১০ ডিসেম্বর থেকে, এই স্বাদ পাওয়া যাবে ১ জানুয়ারী পর্যন্ত। সাধ্যের মধ্যে সাবেকি স্বাদ দিয়ে আজও, বাঙালির মনে বৌবাজারের বড়ুয়া বেকারির অস্তিত্ব চিরস্থায়ী।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/12/3-min-3.jpg)
চিত্র ঋণ – moha-muskil.com
Discussion about this post