মিষ্টি! আপনি যদি মনে প্রাণে বাঙালি হন,নাম শুনলেই দেখবেন মুখটা একটু ভিজে গেল। ভিজেছে? সত্যি বলুন ভেজেনি? “মিষ্টি তৈরী এক গবেষণা,ছানা ও চিনি দিয়ে তৈরি এক শিল্প।” বলে থাকেন বাংলার ময়রারা। বলবেন নাই বা কেন? মিষ্টির রাজা সেই রসের গোল্লা থেকে শুরু করে সন্দেশ, রসমালাই সৃষ্টি সবই তো বাঙালির অনবদ্য কীর্তি। বাঙালির জীবনে মিষ্টিমুখ ছাড়া কোনও শুভকাজ হয় না। এমনকী বিদেশিরাও বাংলায় এলে মিষ্টিমুখ না করে যান না।
প্রথম দিকে ছানা ও ছানার মিষ্টি একরকম পরিত্যাজ্যই ছিল ধর্মীয় কারনবশত। বৈদিক যুগে দুধ ও দুধ থেকে তৈরি ঘি,মাখন ইত্যাদি ছিল দেবখাদ্য। বিশেষ করে ননি ও মাখন অত্যন্ত প্রিয় ছিল শ্রীকৃষ্ণের।এ জন্য দুধ থেকে রূপান্তরিত ওই সব খাদ্য শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু ছানা তৈরি হয় দুধ বিকৃত করে, এ জন্য মনুর বিধানমতে, ছানা ছিল অখাদ্য।কিন্তু সময়ের বদলেছে,তার সাথে বদলেছে বিধান।আজ জগৎ জোড়া নাম ছানা দিয়ে তৈরি বাংলার মিষ্টির।
বাংলার ছানার বিভিন্ন মিষ্টির মধ্যে একটি অন্যতম কুলীন মিষ্টান্ন হল ছানার জিলিপি। নদীয়ার মুড়াগাছা অঞ্চলে এই মিষ্টান্নটির উৎপত্তি। এক সময় কলকাতার ভূপতি রায়ের দোকান ছানার জিলিপি বিখ্যাত ছিল। তবে বর্তমানে ভূপতি রায়ের দোকান আর নেই। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ এই কুলীন মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। স্থানীয় এক মিষ্টি ব্যবসায়ীর কথায়, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থেকেও তারা ছানার জিলিপির অর্ডার পেয়ে থাকেন। তিনি আরো জানান- “এই মিষ্টি তৈরী বড়ই সহজ। প্রথমে চিনির শিরার সব উপকরন দিয়ে চিনির শিরা তৈরী করে নিতে হবে। এবার জিলিপির সব উপকরণ হাতের তালু দিয়ে ভালো করে মেখে একটা ডো তৈরী করে ৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। ডো থেকে তিন ভাগ করে লেছি নিয়ে জিলিপির আকারে তৈরী করে নিতে হবে। একে একে জিলিপি গরম তেলে ভেজে নিতে হবে। ভাজা জিলিপি চিনির শিরায় দিয়ে ফুটিয়ে দশ মিনিট ঢাকা দিয়ে রেখে দিলেই তৈরী ছানার জিলিপি।
বাঙালীর যে কোন খাবারের সাথে মিশে আছে কয়েক শতকের ইতিহাস,ঐতিহ্য।কিছু ক্ষেত্রে বর্তমান অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারনে বাঙালির ঐতিহ্য মিষ্টি তে ক্ষতিকারক পদার্থ মিশলেও। প্রশাসনিক তৎপরতায় না বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে।তাই কাটোয়া র কাছে এলে একবার নিজেই খেয়ে দেখুন এই ছানার জিলিপি ।অবশেষে মিষ্টির আলোচনায় অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির সঙ্গে ভোলা ময়রার কবির লড়াই তো না বললেই নয়। সেই যে – ‘আমি সেই ভোলানাথ নই রে সেই ভোলানাথ নই/ আমি ময়রা ভোলা হরির চ্যালা/ বাগবাজারে রই’।
Discussion about this post