কথায় বলে ‘পেটে খেলে পিঠে সয়’। যদিও এখানে পিঠে খাবারটির কথা বলা হয়নি। তবুও সংক্রান্তির মরসুমে পিঠে শুনলেই পেটটা কেমন যেন খাইখাই করে ওঠে। গ্রামবাংলার ঘরে একটু উঁকিঝুঁকি মারলেই চোখে পড়বে পিঠে পরবের প্রস্তুতি। আদি বাংলার ঐতিহ্য হল এই পিঠেপুলি। তাই শীতের অলস দুপুরে শরীরটা ম্যাজম্যাজ করলেও বাড়ির মেয়ে বৌ-রা ঘড়ঘড় শব্দে চাল বেটে চলে। ঘরে আনা হয় নতুন গুড়, যার মন মাতানো গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। পাটিসাপটা, গোকুল পিঠে, দুধপুলি, সরুচাকলি.।।কাকে ছেড়ে যে কাকে বলি!
সুগার, প্রেসার, থাইরয়েড, ক্যান্সারের বাড়বাড়ন্তে বারণ তালিকায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঢুকে পড়েছে অনেক পিঠে। তবে আসকে পিঠের গায়ে নেই কোনও শরীর খারাপ অভিযোগের কলঙ্ক। তাই উপকারিতার মাপকাঠিতে আবারও পিঠে তালিকায় আসতেই পারে হারিয়ে যেতে বসা এই পিঠে। চলুন তবে এটি বানানোর প্রণালীটি জেনে নেই।
চালবাটা, নুন আর জল। এই সামান্য কিছু জিনিসকে মিশ্রণ বানিয়ে গোলার মত তৈরি করতে হবে। বাজার থেকে আসকে সরা কিনতে হবে। আর তা না পেলে একটু গভীর কড়াও নিতে পারেন। উনুন বা গ্যাস ওভেনে এবার বসিয়ে দিন আসকে সরাটা কিংবা কড়াইটা। এক ডাব্বুহাতা দিয়ে গোলাটিকে চাপা দিতে হবে। হাল্কা গরম আঁচে ওটি পিঠের আকৃতি নেবে। পিঠে হওয়ার পর নিচের অংশটি কাঠের ধোঁয়ায় কালো হয়ে যায়। তাই কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ব্যাস, ঠান্ডা হলে যে কোন গুড় দিয়ে পরিবেশন করা যায় এটি। তাহলে আর একদম অপেক্ষা নয়। ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে ফিরে আসুক পুরোনো ভালোবাসার খাওয়াদাওয়াগুলি।
তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই পিঠে পার্বনেও এসেছে আধুনিকতার ছাপ। আজ আর ঢেঁকিছাঁটা চাল বাড়িতে ঢোকে না। একনাগাড়ে বসে চলে না চাল বাটার ধুম। উনুনের আঁচে না ভাপানো হয় সেদ্ধপিঠে। আধুনিক প্রযুক্তির সান্নিধ্যে এইসব হাড়ভাঙা কষ্টগুলো থেকে মুক্তি পেয়েছি আমরা। কিন্তু তার সাথে হারিয়েছি বেশ কিছু পুরনো ঐতিহ্যের আদরবাসাটি। আজকের গ্যাস ওভেন বা ইন্ডাকশনের যুগে ফিকে হয়েছে বহু পদের বিশেষত্ব। এমনই এক অবহেলিত পিঠে হল আসকে পিঠে। এই পদের জনপ্রিয়তা এখন আর তেমন নেই। ইডলির মতো সাদা চাঁদপানা রূপ তার। ঝোলাগুড়ের বাটিতে এটিকে ডুবিয়ে মুখে দিলেই পরম তৃপ্তির স্বাদ।
Discussion about this post