গোল গোল নরম মিষ্টি। ঘন লালচে দুধ। জমে একেবারে ক্ষীর। বাটি ধরে নাড়া দিলে জমে থাকা ক্ষীর থেকে উঁকি দেয় মিষ্টিগুলো। এই মিষ্টি মুখে দিলেই মিলবে অদ্ভুত প্রশান্তি। সেই শান্তি পেতে যেতে হবে বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলায়। যেখানে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে এই মিষ্টি। রস আর অনন্য স্বাদের জন্য এই মিষ্টির নাম রসমঞ্জরী। এটি গাইবান্ধার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি, যা দেশ পেরিয়ে এখন বিদেশেও যাচ্ছে। আর বাংলাদেশের ভোজনরসিকদের কাছে গাইবান্ধা এখন রসমঞ্জরীর জেলা হিসেবে পরিচিত।
গাইবান্ধার সার্কুলার রোডের ‘রমেশ সুইটস’ এর কর্ণধার রমেশ চন্দ্র ঘোষ ভারতের উড়িষ্যা থেকে কারিগর এনেছিলেন। ১৯৪৮ সালের জুন মাসে সেই কারিগর প্রথম রসমঞ্জরী বানালেন। তারপর বাকিটা ইতিহাস। ধীরে ধীরে রসমঞ্জরীর স্বাদে স্থানীয় মানুষ আকৃষ্ট হলেন। সারা বাংলাদেশে এর পরিচিতি ও সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। গাইবান্ধার এই রসমঞ্জরী শীতের সময় প্রবাসী বাঙালিরা আমেরিকা, কানাডা, সৌদিআরবসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে যান।
প্রতি কেজি রসমঞ্জরি তৈরি করতে প্রয়োজন হয় আড়াই কেজি দুধ। দুধের ছানা লাগে ২০০ গ্রাম, চিনি প্রয়োজন হয় ১০০ গ্রাম, এছাড়া লাগে ২৫ গ্রাম ময়দা ও এলাচ। প্রথমে দুধ নির্দিষ্ট তাপে জ্বাল দিয়ে ঘন করে ক্ষীর বানানো হয়। তারপর গোল গোল করে ছানার ‘বল’ বানিয়ে চিনির সিরায় সিদ্ধ করা হয়। সেই ছানার বল নিদিষ্ট তাপমাত্রায় এলে, সেগুলিকে রসে ভেজানো হয়। এরপর ছানার বলগুলি ক্ষীরের মধ্যে দিয়ে আবার কিছুক্ষণ জ্বাল দেওয়া হয়। এতেই তৈরি হয়ে যায় দারুন স্বাদের রসমঞ্জরী। এক কেজি রসমঞ্জরী তৈরিতে বাংলাদেশের হিসেবে দুই শতাধিক টাকা খরচ হয়ে থাকে।
রমেশ ঘোষের দোকান রসমঞ্জরি তৈরির পথিকৃৎ ছিল ঠিকই। কিন্তু বর্তমানে, রসমঞ্জরী বিক্রিতে খ্যাতি অর্জন করেছে গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভান্ডার। গাইবান্ধার বাইরেও এই রসমঞ্জরি রপ্তানি হয়। আর গাইবান্ধার সব বাড়ীতে ঢুঁ মারলেই দেখা মিলবে রসমঞ্জরির। আপনিও চেখে দেখতেই পারেন। খুব সহজেই আপনিও এই স্বাদের ভাগীদার হতে পারেন বাড়ী বসেই। কারণ, এই মিষ্টি বাংলাদেশের বাইরেও পাঠানোর ব্যবস্থা আছে। এই মিষ্টি দেখতে রসমালাইয়ের মত হলেও তৈরির প্রণালীতে ও স্বাদে ভিন্ন। রসমঞ্জরির সঙ্গে নিমকির গুঁড়ো মিশিয়ে খেয়ে থাকেন গাইবান্ধার মানুষ।
Discussion about this post