বাঙালিদের কাছে ঘোল জিনিসটা দুরকম ভাবে পরিচিত। একরকম ঘোল খাওয়া যদি বা হয় হতাশাদায়ক, অন্যটি কিন্তু বেশ তৃপ্তিদায়ক। আট থেকে আশি সকলের কাছেই পিপাসা মেটাতে তৃপ্তিদায়ক ঘোলের চাহিদা একেবারে আকাশ ছোঁয়া।গরমের দিনে তো বটেই, তাছাড়াও স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশষে যেকোনো সময়ই ঘোল একেবারে দশে দশ! আর এই ঘোলেরই বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছে বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের অন্তর্গত উল্লাপাড়া। উল্লাপাড়ার সলপ রেলস্টেশনকে ঘিরে ঘোলের ব্যবসা গড়ে উঠেছে বলে এটি ‘সলপের ঘোল’ নামেই বেশি পরিচিত।
শতবর্ষব্যাপী এই ব্যবসার শুরু সেই ১৯২০ সালে। স্থানীয়দের কথা অনুসারে, ব্রিটিশ আমল থেকে তৎকালীন সান্যাল জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় সলপে ঘোলের কারখানা গড়ে ওঠে স্থানীয় সাদেক আলি খানের তৎপরতায়। বংশানুক্রমে এখন তাঁর চতুর্থ প্রজন্ম হাল ধরেছে এই ব্যবসার। শুরুতে সলপ থেকে কলকাতায় রপ্তানি হত এই ঘোল। সেই সময় থেকেই সলপের ঘোলের খ্যাতি ছড়িয়ে রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। প্রায় একশো বছর পরেও সলপের ঘোলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন জেলায়।
সলপের ঘোল তৈরির বিশেষ পদ্ধতিও রয়েছে।প্রতিদিন ভোরে আশপাশের গ্রামের খামারিদের কাছ থেকে নেওয়া দুধকে নির্দিষ্ট সময় ধরে জ্বাল দেওয়া হয়। তারপর সেটি সারারাত একটি পাত্রে রেখে দেওয়া হয় ভালোভাবে জমানোর জন্য। পরদিন সকালে জমে থাকা ওই দুধের সঙ্গে চিনি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ মিশিয়ে তৈরি হয় স্বাদে অতুলনীয় সেই ঘোল। এতদিন পরেও স্বাদ এবং মান রয়েছে অটুট। এমনকি দামও তুলনামূলক বেশ সস্তা বলে মনে করেন ক্রেতারা। তাই সুস্বাদু এই পানীয় কিনতে তারা এখানেই আসেন। ব্যবসায়ীদের মতে, গরমকাল এবং রমজান মাস ছাড়াও বিশেষ বিশেষ কিছু দিনে বিক্রিবাটা হয় প্রচুর।
সলপে এখন ৮-৯ টি ঘোলের কারখানা রয়েছে। সেইসব কারখানা থেকে পাইকারি দরে ঘোল কিনে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পেটের ভাত যোগাচ্ছে শতবর্ষব্যাপী ঘোলের এই ব্যবসা। বর্তমানে প্রতি লিটার ঘোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এর সঙ্গে তারা মাঠাও বিক্রি করেন ৮০ টাকায়। ঐতিহ্য ধরে রাখতে ১৯৯০ সাল থেকে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের প্রথম শুক্রবার সলপে আয়োজন করা হয় ‘ঘোল উৎসব’।
Discussion about this post