গত বছরের মত এবছরেরও শীতের আগমন বেশ অনেকটা দেরিতে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পার করেও জাঁকিয়ে শীত অনুভব করতে পারছেন না রাজ্যবাসী। তবে শহর পেরিয়ে গ্রামে গেলে দেখা যায় হালকা কুয়াশার চাদর আর ঘাসে ভোরের শিশিরের পরশ। আর শীত আসা মানেই কাঁথা-কম্বলের চাহিদা বেড়ে যাওয়া। তাই নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই বান্দরবান জেলার শহরতলির বমপল্লিগুলোতে শুরু হয়েছে চাকমাদের বুরগি বোনা। বুরগি হল চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী শীতের চাদর। তাঁতে বোনা এই চাদর উল ও সুতো– দুই দিয়েই তৈরি হয়। শুধুমাত্র শীতের সঙ্গী হিসেবে নয়, বুরগির সূক্ষ্ম কারুকার্যও অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে এই বিশেষ শীতবস্ত্রকে।
এই সময় বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের ফারুকপাড়ায় ঢুঁ মারলে দেখা যাবে প্রায় প্রতিটি ঘরেই চলছে কোমর তাঁতে বুরগি বোনার কাজ। তবে কারিগরদের বেশিরভাগই মহিলা। এক কথায় বলতে গেলে পাহাড়ি শীতবস্ত্র বুরগি মূলত টিকে আছে নারীদের শ্রমে আর মেধায়। তাদের মতে, নভেম্বর থেকেই বান্দরবানে শুরু হয় পর্যটনের মরশুম। তাই এখানে আসা পর্যটকদের মধ্যে এই সময় বুরগির বেশ ভালোই চাহিদা থাকে। বাড়তি আয়ের কারণে তাই মহিলারা কোমর বেঁধে লেগে পড়েন বুরগি বোনার কাজে। এই কাজের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি নারীদের যেমন ঐতিহ্য রক্ষা পাচ্ছে, ঠিক তেমনি পারিবারিক অভাবও কাটাতে পারছেন তারা।
তবে করোনা পরিস্থিতির পর থেকে সুতোর অতিরিক্ত দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আর তেমন লাভ করতে পারেন না কারিগররা। তাদের মতে, একটি বুরগি বানাতে প্রায় দেড় কেজি সুতোর প্রয়োজন। বুনতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাত দিন। কিন্তু বাজারে এখন প্রতি কেজি সুতোর দামই ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। তবু বাড়তি আয়ের আশায় কাজ থামেনি তাদের।
ফারুকপাড়ার মতো লাইমিপাড়া, গ্যেৎসেমানিপাড়াসহ কয়েকটি বমপল্লিতেও মহিলারা একইভাবে তাদের ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলেছে। তাঁতিরা আশপাশের পল্লি ঘুরে বুরগি, শীতের চাদর, মাফলার সংগ্রহ করা শুরু করেছেন। জানা গেছে বুরগি মানের ওপর ভিত্তি করে ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়। চাদর বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় মাফলার বিক্রি হয়ে থাকে। শুধুমাত্র পর্যটকরাই নন, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও চাহিদা রয়েছে বুরগির। তাই জুমের ধান কাটা শেষ হলেই বম নারীরা পুরোদমে লেগে পড়েন বুরগি, মাফলার ও চাদর তৈরিতে। যেটুকু উপায় হয় সেটুকুই তাদের লাভ।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – প্রথম আলো
Discussion about this post