ছবি প্রতীকী
আজকাল শহুরে এলাকায় যানবাহনের ভিড়ে সাইকেলের কদর বেশ অনেকটাই কমেছে। বিশেষত কলকাতার রাজপথে ট্রাফিকের ভিড়ে সাইকেলের দেখা পাওয়া খুবই মুশকিল। তবু গ্রামের পথে ঘাটে, অলিতে গলিতে সাইকেলের কদর রয়েছে। অবশ্য বর্তমান সময়ে পরিবেশ বান্ধব যানবাহন হিসেবে বিদেশে সাইকেলের একটা রেনেসাঁ ঘটেছে বলাই যায়। তাছাড়া শরীর স্বাস্থ্য ফিট রাখার দৌলতে অনেকেই এখন সাইক্লিং বিষয়টাকে শরীরচর্চার একটা অঙ্গ বানিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন, ভারতে প্রথম যে সাইকেল তৈরি হয়েছিল তা কিন্তু আজকের দু চাকার নয়, ছিল তিন চাকার। মহানগরীর প্রতিবেশী জেলা হাওড়ার সাঁতরাগাছিতেই প্রথম এর আবির্ভাব।
সালটা ১৮৭০। প্রসন্নকুমার ঘোষ নামের এক ব্যক্তি নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে বানিয়েছিলেন তিন চাকার একটি গাড়ি। দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি এই সাইকেলটির নাম দিলেন ট্যান্ডম। দেখতে অনেকটাই এখনকার সাইকেলের মত। এর আগে অবস্থাপন্ন লোকজন অবশ্য বিলেত থেকে নিয়ে আসতেন ভেলোসিপেড সাইকেল। তবে সেইসব তো আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই বেশ কয়েকদিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠল তিন চাকার ট্যান্ডম মফঃস্বল বা শহরতলিগুলোতে।
সাইকেলটির সামনে একজন ও পিছনে দুজন বসতে পারত। পিছনের দুজন পা দিয়ে প্যাডেল করলে তা চলতে শুরু করত। এই সময় কলকাতায় জনপ্রিয় ছিল পেনি-ফার্দিং সাইকেল। প্যাডেল দেওয়া এই সাইকেলের সামনের চাকা ছিল বেশ বড়, আর পিছনের চাকা ছিল ছোটো। লেখিকা ইন্দিরা দেবীর লেখায় কলকাতার রাস্তায় পেনি-ফার্দিং এর বর্ণনা পাওয়া যায়। সেই সময় পরিবহণের মাধ্যম হিসেবে সাইকেলের বেশ রমরমা। ১৮৮৬ সালে সাইকেলে চড়ে কলকাতায় আসেন টমাস স্টিভেন্স। তাঁকে দেখতে ময়দানে ভিড় জমিয়েছিল শ’য়ে শ’য়ে লোক। শহর জুড়ে আনন্দের সীমা ছিল না। কলকাতাবাসী সেদিনই আপন করে নিয়েছিলেন দুচাকার এই ছিপছিপে গাড়িটার।
এখন শহরাঞ্চলে সাইকেলের কদর কমেছে অনেকটাই। তবে শহরতলিতে আজও ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে দেখা যায়। তাছাড়া বাজার হাট করতে আজও কাকা জ্যাঠাদের ভরসা সেই সাইকেলই। এমনকি লকডাউনের সময়ও একমাত্র পরিবহনের মাধ্যম ছিল এই সাইকেল। সাইকেলকে নিয়ে কিন্তু বিশ্ববাসীর মতো বাঙালিরও রোমান্টিকতা খুব কম ছিল না। কলকাতার ইতিহাস ঘাঁটলে পাওয়া যায় তারই সাক্ষর।
Discussion about this post