ছবি প্রতীকী
আশি বা নব্বইয়ের দশকে সিনেমা ছিল বিনোদনের প্রধান এক মাধ্যম। তখন না ছিল ঝকঝকে মাল্টিপ্লেক্সের দৈত্যাকার সিনেপর্দা, আর না ছিল ওটিটি প্ল্যাটফর্মের এত রমরমা। থাকার মধ্যে একাকী পর্দার সিনেমা হল গুলোই মাতিয়ে রাখত সেই সময়টাকে। হলগুলো ছিল কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ শুধুই বাংলা বই দেখাতো, একভাগ শুধু হিন্দি, আবার একভাগ মিলিয়ে মিশিয়ে। হাওড়া ময়দান চত্বরে ছিল তেমনি একটা প্রেক্ষাগৃহ ছিল বঙ্গবাসী, যা ছিল বেশ বিখ্যাত এবং সবচেয়ে পুরনো সিনেমা হল। যদিও প্রেক্ষাগৃহের গমগমে আওয়াজ আজ হারিয়ে গিয়েছে শপিং মলের ঔদ্ধত্যে।
শহরের ইতিকথায় ইট কাঠ পাথরের খাঁজে গড়ে উঠেছে হাল আমলের শপিং মল। তৈরি হচ্ছে মাল্টিপ্লেক্স। কিন্তু হাওড়ার সবচেয়ে বড় হল বঙ্গবাসী আর নেই। নেই চেয়ারে বসে থাকা দর্শকদের গলা ফাটানো চিল চিৎকার ‘হাম কিসিসে কম ন্যাহি’। বেছে বেছে ইংলিশ আর হিন্দি সিনেমাই জায়গা পেত হলে। বেশিরভাগ হিন্দি ছায়াছবির জন্যই বিখ্যাত ছিল বঙ্গবাসী। আসলে আবেগ তো মানে না ঐতিহ্য-নবীনের ফারাক। তাই আজকের মাল্টিপ্লেক্সের দৌরাত্ম্য ভুলিয়ে দিতে পারেনি প্রবীণদের এই ছোট ছোট আবেগগুলোকে।
আগেকার দিনের অনেক প্রাচীন প্রেক্ষাগৃহই আজ বড় বড় অট্টালিকার কবলে। আর নাহলে সেই জমি গ্রাস করেছে প্রোমোটাররা। নবীন প্রজন্মের ঝোঁক মাল্টিপ্লেক্সের নরম গদিতে পপকর্ন কোল্ড ড্রিঙ্কস সহযোগে সিনেমা দেখাতেই। তাই পুরনোপন্থী সিনেমা হলগুলোর কদর একেবারেই তলানিতে ঠেকেছে। থাকার মধ্যে আজও টিকে আছে হাওড়ার বহু পুরনো পুষ্পশ্রী সিনেমা হল। কিন্তু যেমন ধরুন, রামরাজাতলার শ্যামলী, শ্যামাশ্রী অঞ্চলের পার্বতী, এছাড়া কলকাতার মিত্রা – এসব হল গুলো থেকে কবে কর্মীরা শেষ আলোটা নিভিয়ে বেরিয়ে গেছে তার খোঁজ আর কে রাখে? এভাবেই ঐতিহ্যের দীর্ঘশ্বাসকে পাথর চাপা দিয়ে নতুনের আগমন।
তবে একেবারে মানুষ ভুলে যায়নি বঙ্গবাসী নামটিকে। একদিন ‘বঙ্গবাসী’ নামক একটা সিনেমাহল ছিল বটে। কিন্তু আগামী প্রজন্মের কাছে সেই সিনেমাহল না থাকুক, ‘বঙ্গবাসী মোড়’ শব্দটা দৈনন্দিন জীবনযাত্রায়, অথবা যানবাহনের সঙ্গে হয়তো রয়ে যাবে। এখনও স্টপেজ হিসেবে মানুষ এই নামটিকেই ধরে রেখেছেন। তবে তাও আর বেশিদিন নয় হয়তো। আসতে আসতে নামটিও নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বসবে শপিং মল, বড় বড় মাল্টিপ্লেক্সের দৌরাত্ম্যে।
Discussion about this post