ধরুন, শীতের কোনও এক সন্ধ্যেবেলায় কোথাও থেকে বাড়ি ফিরছেন! মোড়ের মাথায় বা গলির মুখে ঢোকার থেকে চারিদিক শুধু গুড় আর সেদ্ধ চালের গন্ধ হাওয়ায় ছড়িয়ে আছে। তবে বুঝবেন সেটা বাঙালির পিঠে উৎসবের সন্ধ্যে থুড়ি মকর সংক্রান্তির দিন। পৌষমাসের শেষ দিনটি সংক্রান্তি হিসাবে পালন করে থাকে বাঙালিরা। পাতে হরেক রকম পিঠের মেলা নিয়ে শীতের এই দিনের সন্ধ্যে জমে একেবারে পিঠে থুড়ি ক্ষীর।
পিঠে সাধারণত গরম গরম খাওয়া হলেও আজ অন্য এক পিঠের কথা জানবো। এই পিঠে একবার বানিয়ে নিলেই জমিয়ে মজিয়ে যতদিন খুশি খান! নাম তার শিমুল পিঠে। এটি তথাকথিত চিরাচরিত পিঠে তৈরির প্রণালীর থেকে অনেক ক্ষেত্রেই আলাদা। তার মধ্যে অন্যতম কারণ এতে ডিমের ব্যবহার করা হয়৷ আমরা মোটামুটি ডিম দিয়ে পিঠে তৈরি হতে খুবই কম দেখেছি তথা শুনেছি। দেখতেও বেশ অন্যরকম খানিকটা শিমুল ফুলের মতো তাই এই পিঠের নাম শিমুল পিঠে।
প্রথমেই এটি তৈরি করতে যা যা উপকরণ দরকার তার এক খানা লিস্ট জানা যাক। যা লাগবে তা হল – একটি ডিম, হাফ কাপ দুধ, তিন টেবিল চামচ চিনি, দু টেবিল চামচ সাদা তেল এবং এক কাপ ময়দা। ওহ হ্যাঁ, গুঁড়ো চিনি হলে খুবই সুবিধা হয়৷ সব উপকরণ হাতের সামনে জোগাড় করে নেওয়ার সাথেই একটা বড় বাটিও নিয়ে নিতে হবে সঙ্গে। সমস্ত উপকরণ সেই বাটিতে কেক তৈরি করার মতো একে একে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপরে সমস্ত কিছু মাখিয়ে নিয়ে খেয়াল রাখতে হবে মিশ্রণের পরে ময়দার দলাটা খুব বেশি নরম না হয়৷ দলাটিকে এরপরে চারটি আলাদা লেচিতে ভাগ করে এক একটা করে লেচি লুচির মতো বেলে নিতে হবে। এরপরে কোনও বোতলের ঢাকনার সাহায্যে সেই লুচি গুলি থেকে ছোট ছোট গোল আকৃতির ধাঁচে ফুচকার মতো লুচি বের করে নিতে হবে। এরপরে সেই ফুচকার আকারের লুচি গুলিকে এপাশ ওপাশ মুড়ে শিমুল ফুলের মতো আকার দিতে হবে। এবার কড়াইয়ে কিছুটা সাদা নিয়ে শিমুল ফুলের পিঠে গুলিকে ছাঁকা তেলে ভেজে নিলেই কেল্লা ফতে। পাতে পড়ার জন্য তৈরি গরম গরম এবং খাস্তা শিমুল পিঠে।
শীতের সময় বাঙালি বাড়িতে প্রায় রোজই মা, ঠাকুমাদের হাতের তৈরি নানা খাওয়ারের গন্ধ আমরা পেয়েই থাকি। সে কড়াইশুঁটির কচুরিই হোক নানা রকমের মিষ্টি কিংবা পিঠে। আর এই দিনে গরম গরম গুড়ের পিঠে প্লেটে পড়লেই শুধুই তখন, “পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে।” “হাপুস হুপুস শব্দ, চারিদিক নিস্তব্ধ” হয়ে চেটেপুটে সাফ করে ফেলুন রকম পিঠে দিয়ে সাজানো আপনার প্লেট খানি।
Discussion about this post