বাঙালির মননে মালদার জায়গা সবসময়ের জন্যই তোলা থাকে গৌড় বা ফজলি আমের কারণে। মালদার আমের কদর করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ দুর্লভ। তবে গৌড়বঙ্গের ইতিহাসে আরেকটি এমন মিষ্টি রয়েছে যার রসে মজেছে আট থেকে আশি–সকলেই। শুধু তাই নয়, এই মিষ্টির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর স্মৃতি। সেই মিষ্টি হল প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো মালদার ঐতিহ্যবাহী রসকদম্ব। স্বাদে ও রূপে যা এককথায় অতুলনীয়!
নামের পিছনে রয়েছে বিখ্যাত এক ইতিহাস। চলুন জেনে নেওয়া যাক কী সেই ইতিহাস। আমরা সকলেই জানি, মালদা আগে পরিচিত ছিল গৌড়বঙ্গ নামে। সেসময় রাজ চলছে সুলতান হুসেন শাহ–এর। তাঁর আমলে গৌড়বঙ্গে এসেছিলেন শ্রী চৈতন্যদেব। তিনি রামকেলিতে একটি কদম গাছের নীচে তিনদিনকাটিয়েছিলেন। তখন গোটা গাছটি ছেয়ে গেছিল কদম ফুলে। আর সেই ফুলের আদলে তৈরি মিষ্টি দিয়েই চৈতন্যদেবকে আপ্যায়ন করেছিল গৌড়বাসী। কথিত আছে, সেই থেকেই এই মিষ্টির নাম আজকের রসকদম্ব।
মালদার দোকানগুলোতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা ঠিক যেন একেকটা কদম ফুল। ছোট রসগোল্লার ওপর খাঁটি ক্ষীরের প্রলেপ দেওয়া। তার ওপর গায়ে পোস্ত-চিনি-এলাচের গুঁড়ো। মালদায় পোস্তর চাষ হওয়ার দরুন এই মিষ্টিও বেশ সস্তায় পাওয়া যেত। প্রতি পিস ৬ টাকা অথবা ১০ টাকা। তবে এখন পোস্ত শুনলেই আমবাঙালির মাথায় হাত! তাই অনেক কারিগররা পোস্তর বদলে চিনির প্রলেপ দেন। রসগোল্লার পুর দেওয়ার ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল মেহেরপুরের কারিগরদের হাত ধরে, সেই ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে। সেই থেকে আজও নিজের চাহিদাকে ধরে রেখেছে সগর্বে।
মালদার যেকোনো দোকানেই এই মিষ্টির চাহিদা আকাশছোঁয়া। মালদার গণ্ডি পেরিয়ে রাজ্য, এমনকি দেশ–বিদেশ ও মজেছে রসকদম্বের রসে। তবে আজও মালদার নেতাজি সুভাষ রোডে অবস্থিত রতন সুইটস সেরার সেরা। রীতিমতো লাইন দিয়ে সবুর করে হাতে পাওয়া যায় মেওয়া, থুরি রসকদম্ব। সব মিলিয়ে তাই রসগোল্লার মত এই মিষ্টিও একদিন সরকারি স্বীকৃতি পাবে–এই আশায় রয়েছেন মালদাবাসী।
Discussion about this post