বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর পৌষ মাসে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়তে না পড়তেই বাঙালির মনে প্রাণে শুধুই যেন পিঠে পুলির সুবাস ঘুরে বেড়ায়। মকর সংক্রান্তির হাওয়াতেও যেন পিঠে পিঠে গন্ধ লেগে থাকে। আগেকার দিনে গ্রাম বাংলায় কাঠ-কয়লা কিংবা কেরোসিনের স্টোভের আগুনে তৈরী হতো নানা ধরনের পিঠে। মাটির হাঁড়ি কিংবা মাটির সরায় তৈরী হতো পিঠে। বাড়ির মেয়ে বউদের নিপুণ হাতের দক্ষতায় তৈরি হতো পিঠে। তার যেমন তার স্বাদ তেমন তার কারুকার্য আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নামের রকমফের।
তবে শুধু যে পশ্চিম বাংলার মানুষ পিঠের নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত তা নয়। আসাম, ত্রিপুরা, বাংলাদেশ, ওড়িশা প্রভৃতি জায়গাতেও পিঠে-সংস্কৃতি বেশ রমরমিয়েই চলে। বাংলায় যেমন ভাপা পিঠে, চিতই পিঠে, নকশী পিঠে, দুধ পুলি, রাঙা আলুর রস পিঠে, গোকুল পিঠের চল। তেমনই ওড়িষাতে আরিশা পিঠে, মন্ডা পিঠে, চাকুলি পিঠে। আবার অসমে রয়েছে তিল পিঠে, ঘিলা পিঠে, চুঙা পিঠে, টেকেলি পিঠে ইত্যাদি।
তবে পিঠের বাজার এখন আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে অনেক পরিবর্তনশীল। শহরে বা শহরতলীতে প্রতিবছর পিঠে পুলি উৎসব কিংবা পিঠে পুলি মেলা হয়। আবার শীতকালে মিষ্টির দোকানেও এখন দেখা মেলে নানা ধরনের পিঠের। ঘরের চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে পিঠের ব্যাপ্তিও এখন অনেক। নতুন গুড় আর তার সঙ্গে নতুন চালের গন্ধ দুইয়ে মিলেমিশে যেন ঘ্রাণেই অর্ধ ভোজনং।
পিঠে পুলি পৌষ পার্বণ এসবের মধ্যে মিলেমিশে আছে দেশীয় সংস্কৃতি, নস্টালজিয়া। তাই জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ুক আর নাই বা পড়ুক, শীতের উপস্থিতিতেই যেন আগমনী বার্তা দিয়ে যায় পিঠে পার্বণ।
Discussion about this post