করোনার আতঙ্কে চারপাশের অবস্থা টালমাটাল। চলছে লকডাউন, কমছে আমদানি-রপ্তানি বা উপার্জন। ফলতঃ দেশে সৃষ্টি হয়েছে বেকারত্ব। আর এই সবের মধ্যেই বিরাট এক প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে ভারতীয় অর্থনীতি। যার গ্রাফ দিন দিন নীচের দিকে নামছে। যদিও এ সমস্যার সমাধান হিসাবে টাকা ছাপানোর মতো পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুখে বললেই তো হল না! কাজটা কঠিনই বটে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারত করোনা মুক্ত হলেও তার ‘আফটার এফেক্ট’ কাটিয়ে উঠতেই লেগে যাবে আরও কয়েক মাস। ততো দিনে হয়ত মুখ থুবড়েই পড়বে ভারতীয় অর্থনীতি। যার আশু সমাধান না ভাবলে হয়ত এক কঠিন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে রয়েছে আমাদের।
এই অবস্থায়, সমস্যার সমাধানে একটি অভিনব উপায় বের করেছেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাপস পাল। তিনি যেকোনও ধর্মীয় প্রণামী বাক্সগুলিকে জনহিতকর কাজের স্বার্থে খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। প্রত্যেকটি ধর্মীয় অ্যাকাউন্টে যে পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে তাকে ‘রোলিং ইকোনোমি’ হিসেবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ মানুষের দান করা অর্থই মানুষের সাহায্যে কাজে লাগানো। এই মর্মে, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী সহ ভারতের ১০ টি ধনী মন্দিরের পরিচালন সমিতির কাছে তিনি প্রস্তাবও রেখেছেন। তাঁর কথায়, “এতদিন মানুষ ধর্মের নামে অর্থ দিত, এবার ধর্ম মানুষকে বাঁচাবে। ধর্ম যদি মানবতাই শেখায় তবে ধর্মীয় অ্যাকাউন্ট এবার পরিযায়ী শ্রমিক ও দারিদ্রসীমার নিচের মানুষদের জন্য খুলে দেওয়া হোক।” তিনি এও বলেন যে, এই টাকাকে যে সরাসরি দান করে দিতে হবে সেটা একদমই নয়। নোট ছাপানো, দান-ত্রাণ বা ফ্রিতে খাবার দেওয়া এগুলো কোনও সমাধান নয় বলেই মনে করেন তিনি। তাই খুঁজতে হবে বিকল্প অর্থনীতি।
প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধর্মীয় অর্থ কোনো ক্ষুদ্র শিল্পে নিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন ড. তাপস পাল। এর ফলে বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরী হবে। তাঁর মতে, রোলিং অর্থনীতিতে ধর্মীয় অর্থ কাজে লাগানো যেতেই পারে। এটি খানিকটা মাছের তেলে মাছ ভাজার মতোই। ধর্মশালা তৈরি, গাছ রোপণ, হস্তশিল্প, ক্ষুদ্র অর্থনীতি শিল্পে ছোটো ব্যাঙ্কের মতো মাতৃ সমাজকে অর্থ দিয়ে ও নিযুক্ত করে এটা করা যেতে পারে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি বিভিন্ন গঠনমূলক ব্যবস্থা বাণিজ্যর মধ্য দিয়েই কর্মসংস্থান তৈরী করতে পারে বলেই তিনি মনে করছেন। যদিও তাঁর এই প্রস্তাবের সম্মতিসূচক কোনও বার্তা এখনও মেলেনি। তবে দেশের কঠিন সময়ে তাপস বাবুর এই প্রচেষ্টা সত্যিই নজরকাড়া!
Discussion about this post