উৎসব বলতে বোঝায় যেখানে কোনো সামাজিক বা ধর্মীয় কারণে অনেক মানুষ একসঙ্গে মিলিত হন। যেখানে থাকে না কোনো সাম্প্রদায়িক সীমারেখা, সব মানুষ মিলেমিশে হয়ে যান একাত্ম। রথযাত্রাও হল তেমনই এক উৎসব। এটি পুরীর প্রধান উৎসব হলেও আমাদের বাংলাতেও একে ঘিরে উৎসাহ বা উন্মাদনার কোন রকম ঘাটতি থাকে না। উৎসবে সামিল হন আট থেকে আশি সকলেই। পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্ত থেকে অনেক ছোট বড় অনেক রথ বেরোয়।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে মাহেশের রথ বা ইস্কনের রথ খুবই পরিচিত। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে খাস কলকাতার বুকে খিদিরপুর এলাকায় রয়েছে এক বিশাল জগন্নাথ মন্দির। যার প্রতিষ্ঠা কাল ১৯৭৫ সাল। বিশাল এই মন্দির চত্বরে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরাম ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তিও। এই মন্দিরের সুন্দর কারুকার্য কলকাতার মধ্যে যেন তুলে এনেছে এক খন্ড পুরীকে। পুরীর মন্দিরের মতো এখানেও নিয়মিত পরিবর্তন করা হয় মন্দিরের চূড়ার ধ্বজা। এই রথযাত্রা উৎসবকে কেন্দ্র করে বসে রথের মেলা। মেলায় বিভিন্ন সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেন ভিন ধর্মের মানুষেরাও। এভাবেই গড়ে ওঠে এক অপূর্ব সম্প্রীতির মেলবন্ধন।
প্রথা অনুযায়ী রথযাত্রার দিন ভগবান জগন্নাথ তাঁর ভাই বোনের সঙ্গে যান গুন্ডিচা মন্দিরের উদ্দেশ্যে। যাকে চলতি কথায় বলা হয় মাসির বাড়ি যাওয়া। যেহেতু এই মন্দিরটি অত্যন্ত জনবহুল এলাকায় অবস্থিত। তাই যানজট এড়াতে তিনটি রথকে একটা বড় গাড়িতে করে নিয়ে আসা হয় সল্ট লেকের সেন্ট্রাল পার্কে। যেখান থেকে রথগুলিকে শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হয় স্বভূমি পর্যন্ত। ২০০৩ সাল পর্যন্ত এখানে ছোট করে রথযাত্রা উৎসব পালিত হলেও পরবর্তীতে তা হয় জাঁকজমকের সাথেই। স্বভূমিতে এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে চলে নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
Discussion about this post