রথ বলতেই মাথায় আসে জগন্নাথ, বলরাম আর তাদের আদুরে বোন সুভদ্রার কথা। যারা কিনা লোহার রথে চড়ে এগিয়ে যান মাসির বাড়ির পথে। তবে দেখেছেন কখনো এমন রথযাত্রা? যার সাথে মিশে রাম রহিমের গল্প! এমনই রথযাত্রা প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে আমতার তাজপুর এলাকায়। জমিদারি উঠে গেলেও পালন হয় জমিদার বাড়ির রথ উৎসব। এতে লেগে আছে সম্প্রীতির স্পর্শ।
এককালে রায় পরিবার ছিল তাজপুর এলাকার জমিদার। বর্তমানে কেবল পরে রয়েছে কেতা। এই পরিবারে এক সময়ে কাজ করতেন স্থানীয় সাকু কাজির পূর্ব পূরুষরা। দারোয়ান পদের সে চাকরির পাট কবে চুকে গেছে! কিন্তু তাতে আর কী হয়েছে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এই পরিবারের রথযাত্রায় সামিল হয়ে যান সাকু কাজির পরিবার। রথের দিন ভিড় ফাঁকা করতে লাঠি হাতে হাজির থাকেন কাজির পরিবারের সদস্যরা।
বর্তমানে সাকু কাজি সরকারি চাকরি করেন। কিন্তু প্রতিবার রথের প্রস্তুতি থেকেই দায়িত্ব তার পরিবারের। অন্যদিকে, রায় পরিবারের কূল দেবতা জগন্নাথ দেব খোদ। এ বাড়িতে রয়েছে তার আলাদা ঘর। যদিও রথের দিন তাকে সাজানো হয় দুর্গাদালানে। সজ্জার কাজ পূর্ণ হলে তার স্থান হয় পালকিতে। ব্রাহ্মণরা সেই পালকি কাঁধে করে এনে রথে চাপিয়ে দেন। তারপরেই রায় পরিবারের সদস্য আর গ্রামবাসীরা মিলে টান দেন রথের রশিতে। তবে কিছু দূরে গিয়ে রথ থেমে যায়। জগন্নাথকে একইভাবে পালকিতে চাপিয়ে ব্রাহ্মণরা নিয়ে আসেন জমিদারবাড়িতে। সেখানেই একটি নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করা থাকে তার মাসির বাড়ি স্বরূপ।
আর এ সময়তেই ভিড় সরাতে এগিয়ে আসেন নজরুল, সাকু কাজির ছেলে। রথে জগন্নাথ দেবকে তুলে দেওয়ার সঙ্গে শুরু হয় রথের রশি ছোঁয়ার জন্য কাড়াকাড়ি। ভিড় সরিয়ে এক সময়ে তিনিও ধরেন রথের রশি। একই বৃন্তের দুটি কুসুম ফুটে ওঠার মুহূর্ত সৃষ্টি হয় যেন। এতে রায় পরিবার বেজায় খুশি। আর নজরুল তার পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে চলতে পারার আনন্দে আত্মহারা। রইলো বাকি স্থানীয় বাসিন্দা! আসলে আনন্দের গন্ধ সবাই পায়।
চিত্র ঋণ – আনন্দ বাজার পত্রিকা
Discussion about this post