সারাদিন বৃষ্টি। কখনো ঝিরঝিরে কখনো মুষলধারে কখনো আবার ইলিশে গুঁড়ি। এহেন বাদলায় তো বাড়ি থেকে বেরোনোই মুশকিল। ঠিক জামাকাপড়টি পরে পরিপাটি হয়ে পায়ে জুতোটা গলানোর অপেক্ষা, ব্যাস্ বাইরে টিপ টিপ শব্দ শুরু। এমতাবস্থায় হয় ছাতা নিয়েই বেরিয়ে পড়তে হয় অথবা তেমন জরুরী কাজ না থাকলে বাড়িতেই সময় কাটানো যায়। কিন্তু যারা অফিস যাত্রী, স্কুল পড়ুয়া তাদের কী হবে? বর্ষা বলে তো তাদের ছুটি নেই। এদের জন্যে আছে রেনকোট। আপাদমস্তক রেক্সিনে মোড়া। অবিশ্যি রেনকোটে সাজটা একেবারেই মাটি হয়। এমনকি বর্ষা নিয়ে চিরকাল কবিরা যে প্রেমের গল্প রচনা করে গেছেন তাতেও রেনকোটের কোনো ভূমিকা নেই। রেনকোট বর্ষা দিনের সবচেয়ে কেজো কিন্তু অপরিহার্য একটি বস্তু। যদিও বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষ এই ‘রেনকোট’কেই একটা আধবেলার ছোট্ট প্রেমের ঘটনায় আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় করে দিয়ে গিয়েছেন।
আজকাল রেনকোটের ব্যবহার অবশ্য কিছু কমই দেখা যায়। স্কুল পড়ুয়ারা বেশিরভাগই পুল কার বা স্কুল বাসে চড়ে বসে। ফলত ওই সামান্য গাড়িতে ওঠা নামাটুকুর জন্য কেই বা ওই জোব্বাটা পড়ে! তাছাড়া পথ চলতিরাও মোটামুটি ছাতাতেই কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। ওই ভ্যাপসা রেনকোটে ইদানিং বেশিরভাগেরই আর মন ওঠে না। কিন্তু একদল আছেন যাদের রেনকোট ছাড়া গতি নেই। অবশ্য সেটা ঠিক কোট নয়, বরং জামা প্যান্টের আকারে তৈরি আধুনিক রেইনকোট। এই বস্তুটির ভরসায় আজও নির্বিঘ্নে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন বাইক আরোহীরা। বৃষ্টির দিনে ভিজে রাস্তায় বাইক চালানো এমনিতেই বেশ কঠিন এবং ঝুঁকি সাপেক্ষ। তারওপর এ এমন যান যেখানে ছাতা ধরার কোনো উপায় নেই। তাই অগত্যা বাইক আরোহীরা এখনও রেনকোট ত্যাগ দিতে পারেনি। বিশেষতঃ আজকাল যারা অনলাইনে বুক করা অর্ডার ডেলিভারি দেন বৃষ্টির দিনে রেনকোটই তাদের একমাত্র ভরসা।
একটা সময় ছিল যখন বাড়ির খুদেরা অপেক্ষা করে থাকত এমন একটা বর্ষার যখন তারা প্রথম রেনকোট পাবে। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ বর্ষাকালে স্কুলের বাইরে যেন রঙের মেলা বসে যেত। ছবিটা খানিক জলে রঙিন মাছ ছেড়ে দেওয়ার মতো দাঁড়াতো। ছোটদের রেনকোট দেওয়ার অনেকগুলো কারণ ছিল। ছোট ছাতা যে হত না তা নয় কিন্তু ছাতা ব্যবহারের চেয়ে জামার মতো রেনকোট বিচ্চুদের বদমাইশি করার অনেক বেশি স্বাধীনতা দেয়। জামাকাপড় ভেজার কোনো সম্ভাবনা নেই, বেমক্কা বৃষ্টিতে বেরিয়ে পড়ার আনন্দ থাকলেও মাথা ভিজিয়ে জ্বর বাঁধানোরও সব রাস্তা বন্ধ। আর সব থেকে বড় কথা রেনকোট বর্ষার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করার একটা দারুন সহায়ক।
সারা পৃথিবীতে রঙিন ছাতা বর্ষা দিনের খুবই ফ্যাশনেবল একটি সামগ্রী। কিন্তু জাপানে বেশিরভাগ মানুষই ব্যবহার করেন স্বচ্ছ ছাতা বা ট্রান্সপারেন্ট ছাতা। তাই বলে জাপানের মানুষদেরকে বেরঙিন বলে ভুল করলে একেবারে চলবে না। ওরা আসলে বৃষ্টি এবং নিজেদের দৃষ্টিপথের মাঝে কোনো সামান্য বাধাও সহ্য করে না। অনেকটা এধরনের কাজই করে রেনকোট। বর্ষার সমস্ত রূপ রস গন্ধ কি ওভাবে গায়ে মাখতে পারত যদি স্কুল ফেরত বাচ্চাগুলোর গায়ে রেনকোট না থাকত!
Discussion about this post